বর্তমানে বাজারের যানজট নিরসনে দুটি প্রস্তাব আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলো উপজেলা মোড় থেকে শিকদার মার্কেট হয়ে কুসুমপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক। সড়কটি বর্তমানে এলজিইডির আওতায় গ্রামীণ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার প্রস্থ মাত্র ১২ থেকে ১৪ ফুট। তবে এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় এনে ৩০ ফুট প্রশস্ত করে উন্নয়ন করা হলে পুরো অঞ্চলের চিত্রই পাল্টে যেতে পারে।
এই সড়ক নিমতলা থেকে সড়ক বিভাগের আওতাধীন ৬ কিলোমিটার সড়কের শেষ প্রান্ত—সিরাজদিখান উপজেলা মোড় থেকে শুরু হয়ে শ্রীনগরের ছনবাড়ি-মুক্তারপুর সড়কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এতে গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কেও আসবে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
অপর একটি বিকল্প হচ্ছে শিকদার মার্কেটের কাছে আবিরপাড়া মোড় থেকে সন্তোষপাড়া (এসি ল্যান্ড অফিসের দক্ষিণ পাশে) পর্যন্ত এলজিইডির আওতাধীন প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি সড়ক। এই সড়কের প্রস্থ বর্তমানে ১০ ফুট, যা অন্তত ২৪ ফুটে উন্নীত করা প্রয়োজন।
সিরাজদিখান উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার বলেন, ‘সিরাজদিখান বাজারের যানজট নিরসনে এই দুটি বিকল্পই কার্যকর ও সর্বগ্রহণযোগ্য হবে।’
উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ উল্লাহ বলেন, ‘সিরাজদিখান একটি বৃহৎ বাজার। এর ভেতর দিয়ে যানবাহন চলাচলে নানাবিধ জটলা তৈরি হয়। বাইপাস নির্মাণ ছাড়া এর কোনো কার্যকর সমাধান নেই।’
আরও পড়ুন: মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-মাইক্রো-প্রাইভেটকারের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনা আক্তার বলেন, ‘উপজেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন বাজার এলাকার যানজট। এ সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হারুন-উর-রশীদ বলেন, ‘সড়ক নেটওয়ার্ক সচল রাখতে হলে সিরাজদিখান বাজার বাইপাস অতি জরুরি। এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, একদিকে বাজারের ভেতর দিয়ে যানবাহন চলাচল; অন্যদিকে যত্রতত্র পার্কিং, ইজিবাইকের ইউটার্ন, ট্রাফিক আইন অমান্যসহ নানা কারণে প্রতিদিন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
নিমতলা-ইছাপুরা সড়কের উপজেলা পরিষদের মোড় থেকে গোয়ালবাড়ি মোড় পর্যন্ত মাত্র ৫০০ মিটার রাস্তা পাড়ি দিতে প্রায় ঘণ্টাখানেক যানজটে আটকে থাকতে হয়। জেলার সিরাজদিখান, টঙ্গীবাড়িসহ আশপাশের এলাকার মানুষ প্রতিদিন এই সড়কে চলাচল করেন। রাজধানীর কাছে হওয়ায় ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ রুট।
লতব্দী গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান রাতুল বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে পল্টনের দোকানে যেতে কখনো ৩০ মিনিট লাগে, আবার অনেকদিন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। মূল সমস্যাটি উপজেলা মোড় থেকে গোয়ালবাড়ি মোড় পর্যন্ত আধা কিলোমিটারের মধ্যে।’
ইছাপুরা সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘বাইপাস ছাড়া যানজট থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। উপজেলা মোড় থেকে ইছাপুরা পর্যন্ত বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করলেই সংকট কিছুটা লাঘব হবে।’
সব পক্ষের মতেই স্পষ্ট, সিরাজদিখান বাজার বাইপাস সড়ক এখন সময়ের দাবি। প্রশাসনের সদিচ্ছা ও দ্রুত পদক্ষেপই হতে পারে এই অঞ্চলের যানজট নিরসনের একমাত্র উপায়।
]]>