ওভাল টেস্টের শেষ দিনে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল স্রেফ ৩৫ রান, হাতে ছিল ৪ উইকেট। তবে সিরাজের আগুনে বোলিংয়ের সামনে টিকতে পারেননি ইংল্যান্ডের বাকি ব্যাটাররা। ডানহাতি এই পেসারের সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন বাকিরা। ফলে ৬ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ ড্র করে ভারত।
দ্বিতীয় ইনিংসে ফাইফার নিয়ে দলকে জেতানোর রীতিমতো প্রশংসায় ভাসছেন সিরাজ। পুরো সিরিজেই দারুণ খেলেছেন এই পেসার। ভারতের একমাত্র পেসার হিসেবে সিরিজের সবগুলো ম্যাচই খেলেছেন তিনি। তা ছাড়া সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও ডানহাতি এই পেসার। পাঁচ ম্যাচে নিয়েছেন ২৩ উইকেট।
দলের জন্য তিনি যা করেছেন, তার জন্য অবশ্য সিরাজের স্বীকৃতিটা বরাবরই একটু কম। বুমরাহ, আকাশ দীপরা উইকেট শিকার করে যে স্বীকৃতি পান, সিরাজ অবশ্য সেটুকুও পান না। ওভালে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ৯ উইকেট শিকার করেছেন সিরাজ, যার মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছে ৫টি।
আরও পড়ুন: নতুন অস্ত্রের সন্ধানে শৈশবের কোচের ডেরায় নাহিদ
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সিরাজকে অশ্বিন বলেছেন, ‘আমরা মোহাম্মদ সিরাজকে চিনতেই পারিনি। এখন সময় এসেছে তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার। সে আবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, একটা বড় বার্তা দিয়েছে। ওর উদযাপন দেখলেই বোঝা যায়, ও যেন বলতে চাইছে এটা ট্রেলার না, এটা পুরো সিনেমা। সে বলছে, আমাকে ম্যাচ উইনার হিসেবে বিবেচনা করুন। ও আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে সে একজন চ্যাম্পিয়ন বোলার। তার অ্যাকশন, টেকনিক আর পরিশ্রম তাকে একটানা পাঁচ টেস্ট খেলার সামর্থ্য দিচ্ছে।’
ইংল্যান্ড সফরে মোট ১৮৭ ওভার বল করেছেন সিরাজ, যা এই সিরিজে কোনো বোলারের সর্বোচ্চ। অশ্বিন বলেন, ‘সিরাজ এখন আর তরুণ না। টিম ম্যানেজমেন্টের উচিত তাকে অপ্রয়োজনীয় ম্যাচগুলো থেকে বিশ্রাম দেওয়া। সে হতে পারে আমাদের প্রধান টেস্ট বোলার, হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অস্ত্র। আমাদের বোলিং আক্রমণ আবার নতুনভাবে গড়তে হবে। আমাদের আকাশ দীপ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, আর্শদীপ সিং আছে। তবে সিরাজের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করেই এই আক্রমণ গড়ে তুলতে হবে।’
আরও পড়ুন: ভারতীয় দলের অভিধান থেকে ‘ওয়ার্কলোড’ মুছে ফেলতে চান গাভাস্কার
অশ্বিন আরও বলেন, ‘চলো আমরা সিরাজকে নিয়ে উদযাপন করি। সে এই সিরিজের নায়ক। দীনেশ কার্তিক দুইবার ওর সাক্ষাৎকার নিয়েছে, চতুর্থ দিন একবার, আরেকবার ম্যাচ শেষে। সে শুধু প্রশ্ন করেছিল ইংরেজিতে, অনুবাদক হিসেবেও সে-ই ছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সিরাজ বলেছিলেন, ‘আমরা জাসি (বুমরাহ) ভাইয়ের ওপর ভরসা রাখি।’ কিন্তু আজ জাসি (বুমরাহ) ভাই না- এই সিরিজ ড্র করার পেছনে সত্যিকারের কৃতিত্ব মিয়া (সিরাজ) ভাইয়ের।’
সবশেষে অশ্বিন বলেন, ‘ক্রিকেট ঈশ্বররা সিরাজের প্রতি সুবিচার করেছে। সে কখনো থামে না, কখনো অজুহাত দেয় না। কেউ যদি সব টেস্ট খেলে বলে আমি ক্লান্ত, ব্যথা হচ্ছে- সিরাজ তেমন না। সে সবসময় মাঠে থাকে, কখনো বাইরে যায় না। ক্রিকেট ঈশ্বররা এই জিনিসগুলো দেখে রাখেন। এই স্বীকৃতি তার প্রাপ্য। সিরাজের মতো ক্রিকেটার পাওয়া খুব কঠিন। ভারতে এমন মানসিকতার বোলার খুব কম আসে। সে তার প্রজন্মের মধ্যে প্রথম এবং বিরল এক প্রতিভা- শুধু দক্ষতা নয়, মনোভাবেও।’
]]>