এ বিষয়ে সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষে কুইন ইমানুয়েল উর্কুহার্ট অ্যান্ড সালিভান নামে একটি আইনি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এস আলম গোষ্ঠী ১ লাখ ২০ হাজার কোটি পাচারের অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই অভিযোগ তোলেন। ওই সাক্ষাৎকারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
চিঠির একটি অনুলিপি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে এসেছে। অভিযোগ, গভর্নর আহসান মনসুর এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনসমক্ষে ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক’ আখ্যা দেয়া হয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।
আরও পড়ুন: ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে এস আলম’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভুল ও মানহানিকর।
সাইফুল আলম কবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সে বিষয়ে আইনি প্রতিষ্ঠানের কাছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানতে চাইলে তারা সাড়া দেয়নি। তারা এখনও বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তা–ও জানা যায়নি। সিঙ্গাপুর সরকারও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি হয়েছে ২০০৪ সালে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আইন মেনে বিদেশে বিনিয়োগের কোনো অনুমোদন সাইফুল আলম নেননি। দেশের যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগ করেছে, সেই তালিকায় সাইফুল আলমের নাম নেই।
অন্যদিকে, সিঙ্গাপুরের আইনে ২৫ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ২৩ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে নাগরিক হওয়া যায়। এ জন্য তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। পাশাপাশি সেই দেশে আরও বিনিয়োগ করতে হয়। এটা করতে পারলে তাদের ছেলে সন্তানেরা সে দেশে সরকারি চাকরির সুযোগও পান। তবে সিঙ্গাপুরের নাগরিক নিতে হলে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তির অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের মন্তব্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। আরও বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের বিদেশি বেসরকারি আইন অনুসারে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম ও তার পরিবারের অধিকার ও সুরক্ষা আছে।
বিনিয়োগকারীরা হিসেবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু আন্তর্জাতিক সালিসি মামলা নয়, প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থাও নেয়া হবে।
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, তার দাবির শতভাগ ভিত্তি আছে। বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক বছর ধরে এসব দুর্নীতি হয়েছে। এসব তথ্যপ্রমাণ সংকলন করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ সংকলন করতে সময় লাগবে।
]]>