‘আস-সালাম’ শব্দটি মূলত আল্লাহ তাআলার একটি গুণবাচক নাম, যার অর্থ—শান্তির উৎস এবং নিরাপত্তার আশ্রয়দাতা। একজন মুসলমান যখন অপর মুসলমানকে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলেন, তখন তিনি মূলত তার জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণের দোয়া করছেন। এর প্রতিউত্তরে বলা হয় ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম’, অর্থাৎ ‘আপনাকেও আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক’।
সালামের সূচনার পেছনে নবুয়তের ইতিহাস
ইসলামি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সর্বপ্রথম সালাম প্রবর্তনের ঘটনা ঘটেছিল হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। সহিহ বুখারির একটি হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর তাকে নির্দেশ দেন ফেরেশতাদের একদলের কাছে গিয়ে সালাম করতে এবং তাদের জবাব শোনা। আদম (আ.) গিয়ে বলেন, ‘আস-সালামু আলাইকুম’। ফেরেশতারা উত্তর দেন, ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। তারা উত্তরে ‘রহমাতুল্লাহ’ (আল্লাহর দয়া) শব্দটি যোগ করেন। আল্লাহ তায়ালা তখন বলেন, এ সালামই হবে তোমার এবং তোমার উত্তরসূরিদের জন্য সামাজিক সম্ভাষণের রীতি।
এই ঘটনার মাধ্যমেই সালাম ইসলামি সংস্কৃতিতে একটি মৌলিক ও মর্যাদাপূর্ণ রূপ লাভ করে।
আরও পড়ুন: মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ কত টাকা?
কোরআনে সালামের নির্দেশ
পবিত্র কোরআনেও সালামের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সুরা নিসার একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘যখন তোমাদেরকে সম্ভাষণ করা হবে, তখন তোমরাও তা আরও উত্তমভাবে প্রত্যুত্তর দাও, অথবা অনুরূপভাবে জবাব দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর হিসাব গ্রহণকারী। (সুরা নিসা ৮৬)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সালামের জবাব কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। কেউ যদি শুধু ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলে, তার উত্তরে কমপক্ষে ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম’ বলা উচিত। আরও উত্তম হবে যদি বলা হয়, ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বা ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’।
সালাম কেবল একটি ভাষাগত সম্ভাষণ নয়; বরং এটি ইসলামী সমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও শান্তির বন্ধন গড়ে তোলে। সালামের মাধ্যমে মানুষ একে-অপরকে আল্লাহর কৃপা ও শান্তির আশ্বাস দেয়। তাই এ রীতিকে গুরুত্বসহকারে অনুসরণ করা উচিত প্রতিটি মুসলমানের।
]]>