কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর মা ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞার পর গত ৪ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনে এখানে মাছ বিক্রি হয়েছে ২২৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৮৮ মেট্রিক টন ইলিশ। আর এ থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে ১১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।
তবে জেলেরা বলছেন, সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। অন্য প্রজাতির মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে পেলেও দাম কম। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। ঋণ আর দাদনের চাপে তারা দিশেহারা।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর একই সময়ে মাছের অবতরণ কম হয়েছে। আগের তুলনায় ইলিশও মিলছে কম। এজন্য রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সরবরাহ বাড়লেও মাওয়ায় চড়া ইলিশের দাম
সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসা এফবি আল্লাহর মর্জি ট্রলারের মাঝি বেলাল হোসেন বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখ টাকার বাজার নিয়ে সাগরে ১৭ দিন মাছ শিকার করেছেন। যে মাছ পেয়েছেন তার দাম আড়াই লাখ টাকা হবে। তবে ইলিশ মাছ নেই বললেই চলে। এ ট্রিপে আমাদের লাখ টাকা লস। বিভিন্ন প্রজাতির অন্য যে মাছ পেয়েছি, তার দাম খুবই কম।’
জেলে সালাম মোল্লা বলেন, ‘আমরা সাগরে ইলিশ শিকার করতে যাই। কিন্তু ইলিশের দেখা মিলে না; মেলে অন্য মাছ। এসব মাছের চাহিদা কম থাকায় দামও পাওয়া যায় না। ইলিশ পেলে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু ইলিশের অভাবে লসে আছি।’
এফবি সৈকত ট্রলারের জেলে ইউসুফ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে গিয়ে খুব একটা সুবিধা হয়নি। দুলাখ টাকা খরচ করে সাগরে গিয়েছিলাম। যে মাছ পেয়েছি, তার দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা হবে। আমরা ট্রলারে ১৭ জন জেলে। ভাগে সামান্য কিছু টাকা পড়বে। এ টাকা দিয়ে ঋণ শোধ তো দূরের কথা, সংসারের খরচ বহন করাই দায় হয়ে পড়বে। সব মিলিয়ে আমাদের দিশেহারা অবস্থা।’
আরও পড়ুন: এক ইলিশের দাম ৬ হাজার ৩২৫ টাকা!
বাসরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী আলম মোল্লা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষের পর জেলেরা যে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। খালি হাতেই ফিরেছে অধিকাংশ ট্রলার। দু-একটি ট্রলার যে মাছ পেয়েছে, তাতে ইলিশ তেমন নেই। এতে জেলেরা লাভবান হতে পারেনি।’
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর গত বছর অবতরণ কেন্দ্রে যে পরিমাণ মাছ বিক্রি হয়েছিল, এবার তার থেকে অনেক কম হয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবার আশঙ্কাজনক হারে ইলিশের পরিমাণ কমে গেছে। ঘাটে প্রতিদিন যে ট্রলার আসছে তাতে নামেমাত্র ইলিশ থাকছে। অন্য প্রজাতির মাছের আধিক্যই বেশি। ইলিশ মাছ কম আসায় রাজস্ব আদায়ও গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে।’
]]>