সামরিক বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও ৬০ দিন বাড়িয়েছে সরকার

২ সপ্তাহ আগে
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও ৬০ দিন বাড়িয়েছে সরকার। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) তারিখের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা যায়, বলছে স্থানীয় গণমাধ্যম। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদুর্ব্ধ সমপদমার্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের সারা বাংলাদেশে বিশেষ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রজ্ঞাপনের তারিখ থেকে ৬০ দিনের জন্য দেয়া করা হয়। প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারা অনুযায়ী এই এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর আগে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয় নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের। ওই প্রজ্ঞাপনেও সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সশস্ত্র বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার দুইটি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু। ১৩ দিন আগে-পরে প্রজ্ঞাপন জারি হলেও সশস্ত্র বাহিনীর সবার একইদিন বিচারিক ক্ষমতা শেষ হওয়ার কথা ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান জেতী প্রু। তিনি বলেন, “আগের আদেশটিতে সংশোধন এনে 'সশস্ত্র বাহিনী' করা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনে সংশোধন এনে 'সেনাবাহিনী'র জায়গায় 'সশস্ত্র বাহিনী' শব্দটি যোগ করা হয়েছে। তবে, এর জন্য নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি, পুরোনো প্রজ্ঞাপনের একই স্মারক ও তারিখ প্রতিস্থাপিত হয়েছে।" সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে আরো ৬০ দিনের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেলেন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় দফায় এই মেয়াদ আবারও বাড়ানোর আভাস পাওয়া গিয়েছিল প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের এক বক্তব্যে। বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোকে একটি সাক্ষাৎকার দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ড. ইউনূসের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়- সশস্ত্র বাহিনীকে দুই মাসের জন্য বিচারিক ক্ষমতার সময়টা যথেষ্ট কিনা। এই প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা মনে করলাম, প্রথম দুই মাস দিয়ে দেখি। যদি মনে হয় কাজ হচ্ছে, তাহলে তো তা বাড়াতে হবে। আশা করি, তারাও সম্মত হবে। এটা নিয়ে আমরা অগ্রসর হতে চাইছি। তবে দুই মাস পরীক্ষামূলক বিষয়। নানা রকমের দুশ্চিন্তাও আসে। এটাতে ক্ষমতার অপব্যবহার হয় কি না।" সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস আরও বলেন, “একজন না বুঝে ক্ষমতার একটা অপব্যবহার করে ফেলল, তাহলে তো সেনাবাহিনীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সেনাবাহিনীর একজন সদস্য, অফিসার যদি তা করে, এটার দুর্নাম সেনাবাহিনীর ওপর আসবে। আমাদের ওপরও আসবে, কেন আপনি এটা দিলেন। আমরা সেটাও দেখতে চাইছি, তারাও সুন্দরভাবে করার চেষ্টা করছে।” গত ৩ অক্টোবর মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়-সেপ্টেম্বরে দেশে অন্তত ২৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং পিটিয়ে আরও ১৪ জনকে আহত করা হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “বাংলাদেশের নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব ছিল পুলিশের। সেখানে কিছুটা কাজ করতো র‌্যাব। গত ৫ আগস্টে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতে সেখানে এই দুই বাহিনী মানুষের জনরোষ ও আক্রোশের শিকার হয়। অনেকগুলো পুলিশের থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেক পুলিশ পালিয়ে যায় এবং কর্মস্থলে ছিল না। সেখানে আইনশৃঙ্খলা অনেকটা বিপদজনক অবস্থায় চলে যায়।” তিনি আরও বলেন, “সেখান থেকে পরিত্রাণ ও পুলিশ বাহিনী তাদের দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত…সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদেরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়। সঙ্গে নৌ ও বিমান বাহিনীকে দেওয়া হয়। তাদেরকে ক্ষমতা দেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অশব্যই উন্নতি হয়েছে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর যেন অবনতি না ঘটে সেই লক্ষ্যে এটা করা হয়েছিল বলে আমি মনে করি।” এই নিরাপত্তা বিশ্লেষকের অভিমত, “সেনাবাহিনী মানুষের মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখছে এখন পর্যন্ত, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয় সেটাই চেষ্টা করছে। “ “কর্তৃপক্ষ যখন মনে করবে পুলিশ পুরো মাত্রায় কাজ করেছে, তাহলে সেনাবাহিনী থাকার দরকার নেই। আর যদি মনে করে পুলিশ এখন কার্যকরভাবে কাজ করছে না, তাহলে সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা বাড়ানো উচিত আমার ব্যক্তিগত মতামত। যাতে মানুষ কোনো কারণে দাঙ্গা, সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত না হয়” বলেও যোগ করেন এমদাদুল ইসলাম। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ১৪ নভেম্বর বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদানের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে ২ মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছিল। তিনি এটির মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে এবং এতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানান।  সেদিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, "পুলিশ বাহিনীকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ করার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অরাজনৈতিক। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এ সরকারের আমলে সততা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে পুলিশ বাহিনীকে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে।" সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে ১৯ জুলাই দিবাগত রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এখনো সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। (এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আদিত্য রিমন।)
সম্পূর্ণ পড়ুন