রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। থানা-ডিবি-র্যাবের তদন্তেও ভেদ হয়নি রহস্য। উল্টো এক যুগ ধরে তদন্ত করেও প্রতিবদেন জমা দিতে ব্যর্থ র্যাব। আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে তারিখ পড়েছে রেকর্ড ১১৫ বার।
র্যাবের তদন্তে উঠে আসা সন্ধিগ্ধ দুজন ঘাতকের ডিএনএ নমুন ম্যাচিংয়ে বিগত সরকারের অনীহা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।
রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সময় সংবাদকে বলেন,
আদালতের কাছে বলেছিলাম যে সরকারকে বলা হোক যেন গুগলের কাছ থেকে ওই সময়ে সেখানে কারা কারা গিয়েছিল, সেই স্যাটেলাইট ভিডিও যদি পাওয়া যায়। তাহলে সেখান থেকে হয়তো শনাক্ত করা যাবে যে কারা কারা ওই বাসায় ঢুকেছে। তখন ডিএনএ পরীক্ষা করতে সুবিধা হবে। কিন্তু আমি যখন আবেদন করি, তখন সেই আবেদনের বিরোধিতা করে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। এ কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে যে এটার পেছনে একটা রহস্য আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে গেল নভেম্বরে পিবিআইপ্রধানের নেতৃত্বে কাজ করছে টাস্কফোর্স। তিন মাসে কতদূর এগিয়েছে তদন্ত?
আরও পড়ুন: টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু, গোপনে ঢাকা ঘুরে গেলেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত আইজিপি মোস্তফা কামাল বলেন,
১২ বছর যে তদন্ত করা হয়েছে, তাতে তারা কী পেয়েছেন- সেটার রিভিউ করতে হচ্ছে। যারা অতীতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তাদের বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করি।
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ায় মামলাটির অনেক আলামত খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে।
তিনি বলেন,
আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। এ ব্যাপারে যেসব দক্ষ কর্মকর্তাদের জড়িত করা হয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের ভালো ট্র্যাক রেকর্ড আছে। সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। বাকিটা নির্ভর করছে ডিএনএ পরীক্ষাসহ কিছু প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণের ওপর। সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। পিবিআই কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গেও কথা বলছেন। আমরা আশা করছি, তারা ফলপ্রসূ কিছু বের করতে পারবেন। এখানে শুধু একটাই চ্যালেঞ্জিং বিষয় আছে, সেটা হলো যেহেতু অনেক দিন পার হয়ে গেছে, সেজন্য তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ডিসঅ্যাপিয়ার হয়ে গেছে।
মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলী রোমেল বলেন, ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা সফল হতে দেয়া হবে না।
আরও পড়ুন: সাভারে হত্যার লাশ পোড়ানো / ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষায় কবর থেকে তোলা হলো ৪ মরদেহ
নওশের আলী রোমেল বলেন,
ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা সফল হবে না। এটি আমরা মেনেও নেব না। যতক্ষণ পর্যন্ত ফলাফল না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আশাবাদী হতে পারছি না। সারাজীবনই এটার বিচার আশা করব। কোনো ঘটনাকে কীভাবে ধামাচাপা দেয়া হয়, সেটা চোখের সামনে অনেক দেখেছি।
‘যারা তদন্তের সঙ্গে ভালোভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত বলে মনে করি। কারণ আমার ধারণা, তারা অনেক কিছু জানেন’, যোগ করেন তিনি।
এ মামলায় গ্রেফতার মেহরুন রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ ৮ আসামির কেউই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। তাদের সবাই জামিনে রয়েছেন।
]]>