সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনে ‘বৈশাখী জেয়াফত’

৫ দিন আগে
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণ নামে একটি সংগঠন ‘বৈশাখী জেয়াফত’ শীর্ষক প্রতীকী কর্মসূচির আয়োজন করে। বর্ষবরণ শোভাযাত্রা এবং সংশ্লিষ্ট আয়োজনের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সামনে থেকে শুরু হয়ে এই কর্মসূচি মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। সংগঠনের মুখপাত্র আবু মুস্তাফিজ জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচির আওতায় ‘বৈশাখী জেয়াফত’ পালিত হয়েছে। মুসলিম জনগোষ্ঠীর চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি উদযাপনের উদ্দেশ্যে প্রতীকীভাবে গরু জবাই করে গণ-জেয়াফতের আয়োজন করা হয়।

 

তিনি অভিযোগ করেন, বিগত তিন দশক ধরে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের নামে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে পৌরাণিক ও সাম্প্রদায়িক উপাদান ঢুকিয়ে ভারতীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে চারুকলা অনুষদের আয়োজিত ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ বর্তমানে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’তে রূপ নিয়েছে, যেখানে হিন্দু ধর্মীয় প্রতীক ও বিকৃত কার্টুনের আধিক্য দেখা যায়।

 

আরও পড়ুন: বর্ষবরণেও ফুটে উঠল জুলাই অভ্যুত্থান

 

আবু মুস্তাফিজ আরও বলেন, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি—যেমন হালখাতা, গ্রামীণ মেলা, শিরনি বিতরণ, বৃষ্টির গান, মুর্শিদি ও ভাটিয়ালি গান—এইসবই ছিল পয়লা বৈশাখের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এখন এসবের পরিবর্তে চাপিয়ে দেওয়া একটি কৃত্রিম সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে মূলধারার জনগণকে বিদ্রূপের পাত্র বানানো হয়েছে এবং তা-ই জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

 

তিনি উল্লেখ করেন, যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করেছে, তবে এটি সাময়িক সিদ্ধান্ত, এবং আগের মতোই ধর্মীয় মূর্তিচিহ্ন দিয়ে উৎসব উদযাপন অব্যাহত রয়েছে।

 

সংগঠনটির পাঁচ দফা দাবি: ১. শোভাযাত্রা ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্মসূচিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। ২. জাতীয় দিবস ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সব ধর্ম, জাতি ও জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্র্য ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান রেখে একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ৩. বাংলাদেশের সহজাত জীবনধারা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ভিত্তি করে একটি নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ের উপর ভিত্তি করা সংস্কৃতি গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা আয়োজন করতে হবে। ৪. ‘বৈশাখী জেয়াফত’ শুধুমাত্র একটি প্রতিবাদ নয়, বরং এটি একটি বিশ্বাসভিত্তিক, ন্যায়নিষ্ঠ ও গণমুখী সংস্কৃতির পথচলার আহ্বান। ৫. চিন্তাশীল নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি এই উদ্যোগে সংহতি প্রকাশ ও সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন