রাজিব হোসেন ফরিদপুর সিভিল কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হোন। তবে তাকে ডেকে নিয়ে যোগদানে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসানের বিরুদ্ধে।
যোগদানের দিনে তাকে ডেকে নিয়ে চাকরিটা হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেন এই কর্মকর্তা। এমনকি ভালো কিছু পাবা বলেও দোয়া করে দেন। অপরদিকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার দুইদিন পরে কোনো কারণ না দেখিয়ে তার ফলাফল স্থগিত করে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়।
রাজিব হোসেন জেলা সদরের পদ্মা নদীর চরবেষ্টিত নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের মোহাম্মাদ মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার এলাকার কৃষক সোহরাব জমাদ্দারের ছেলে। সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ২০১৮ সালে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও ২০১৯ সালে একই বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি সামান্য বেতনে শহরের একজন চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। সামান্য বেতনে বাবা-মা ও স্ত্রী, একমাত্র সন্তানের খরচ চালাতে হিমশিম খেতেন।
জানা যায়, গত বছরের ২৫ মার্চ ৯টি ক্যাটাগরিতে শূন্য পদে ১২৯ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। এরমধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে ১০৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে আবেদন করেন রাজীব হোসেন এবং গত ২৩ মে লিখিত ও ২৬ মে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে চাঁদাবাজি মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজরসহ গ্রেফতার ৫
এরপর ২৯ মে চূড়ান্ত ফলাফলের ঘোষণা করা হয়। ওই ফলাফলে নিয়োগের ১০ নং শর্তানুযায়ী সাবেক ১নং ওয়ার্ডে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে তার রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়। এছাড়া তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়ে ১ জুন চাকরিতে যোগদানের জন্য আহ্বান জানায় জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।
সেই ধারাবাহিকতায় চোখে-মুখে ঝলমল হাসি নিয়ে ছুটে আসেন তিনি। একে একে অনেককে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে নেন সিভিল সার্জন। এরমধ্যে ভিন্নভাবে সিভিল সার্জনের কক্ষে ডেকে নেয়া হয় তাকে।
রাজিব হোসেন বলেন, সিভিল সার্জন স্যার আমাকে বলেন- তুমিতো নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আসছো কিন্তু তোমার চাকরিটা হবে না। আমি তখন কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলেন, আমরা যেকোনো সময় ফলাফল পরিবর্তন করতে পারি। তখন আমি বলি- এ ধরনের কোনো নোটিশতো দেননি, দিলেতো আমি আসতাম না। তখন সে আমাকে দোয়া করে বলে- তুমি এর চেয়ে ভাল কিছু করতে পারবা।
এরপর ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন রাজিব। আবারও সিভিল সার্জনের কক্ষে প্রবেশ করেন। রাজিবের ভাষ্য অনুযায়ী, সিভিল সার্জনকে বলেন, স্যার আমার তো অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমার ক্ষতির কি হবে, আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। তখন ওই কর্মকর্তা উত্তরে হতভম্ব হয়ে বলেন, আমাদের ভুল হয়ে গেছে। তোমার ইউনিয়নে মেধা তালিকায় ২য় হওয়ায় তোমাকে পাশের ওয়ার্ডে নেয়া হয়েছে কিন্তু ওই ওয়ার্ডে ৫ম স্থানের একজন রয়েছে, তাকে নেয়া হবে।
রাজিব হোসেন বলেন, আমার চাকরির শেষ বয়স। অনেক কষ্ট করে চাকরিটা পেয়েছি। এখন যদি চাকরিটা না হয় আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। আমার চাকরি ফিরিয়ে দেয়া হোক নয় পুরো নিয়োগ বাতিল করে দেয়া হোক। আমার টাকা নাই বলে কি চাকরিটা হবে না। এই বলে কেঁদে দেন রাজিব।
বিষয়টি জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগও করেন তিনি। এছাড়া এই নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে দুর্ধর্ষ চুরি / গৃহবধূর হার্ট সার্জারির টাকাসহ ২০ লাখ টাকার মালামাল চুরি
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জুনায়েদ হোসেন বলেন, আমার স্ত্রীও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সে অকৃতকার্য হয়েছে। রাজিব হোসেনের চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া সবই ঠিক ছিল। তাকে যোগদান করার জন্য তার মোবাইলে এসএমএসও এসেছিল। যোগদান করতে আসলে তাকে নেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যোগদান করতে আসলে তাকে বাধা দেয়া হয়েছে। অবশ্যই এর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে। আমরা দাবি জানাই রাজি হোসেনকে যোগদান করতে ব্যবস্থা নেয়া হোক। একটা ছেলের চাকরি হয়েছে পরিবার এবং এলাকাবাসীর সবাই খুশি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে যোগদান করতে দিচ্ছে না। আমরা মনে করি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অন্য কাউকে নিয়ে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, যা কিছু হয়েছে নিয়মের মধ্যে থেকেই হয়েছে। বাধা দেয়ার কিছু নেই। কারণ, কোনো ভুল ভ্রান্তি হলে কর্তৃপক্ষ সেই ফলাফল স্থগিত করে দিতে পারবে। রাজিব ৩ নং ওয়ার্ডের লোক হওয়ায় এক্সেল সিটের ভুলক্রমে পার্শ্ববর্তী হিসেবে ১ নং ওয়ার্ডে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে পার্শ্ববর্তী বলতে ২ নং ওয়ার্ড হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১নং ওয়ার্ডের একজন পাশ করেছে সে যত মার্কই পায়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে এবং তদন্ত অনুযায়ী প্রকৃত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হবে।
কিন্তু নিয়োগের শর্তানুযায়ী উল্লেখ রয়েছে- সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে একই ইউনিয়নের অন্য ওয়ার্ডের যোগ্য প্রার্থীদের বিবেচনা করা হবে। সেখানে পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ড হিসেবে কোনো কথা উল্লেখ নেই।
]]>