সমুদ্রে নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ আহরণ, ভেস্তে যাচ্ছে উৎপাদন বৃদ্ধির সব পরিকল্পনা

২ সপ্তাহ আগে
সমুদ্রে দিন দিন বাড়ছে মাছ ধরায় অনুমোদনহীন নৌযান ট্রলিং বোট। এসব নৌযানে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করায় মারা পড়ছে সব প্রজাতির মাছের পোনা। মৎস্যজীবীরা বলছেন, ট্রলিং বোটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই মাছ শূন্য হয়ে পড়বে সমুদ্র। গবেষকরা বলছেন, অগভীর সমুদ্রে ট্রলিং বোট দিয়ে মাছ শিকার করায় ধ্বংস হচ্ছে মাছের আবাসস্থল। এতে ভেস্তে যাচ্ছে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের সব পরিকল্পনা।

সরেজমিনে বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, সমুদ্রে মাছ শিকার শেষে বরগুনার পাথরঘাটার বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে আছে নিষিদ্ধ ট্রলিং বোর্ড। এসব নৌযানে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হয়। প্রতিটি বোটেই নিষিদ্ধ জালে ভরা। এসব জাল পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।


মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ট্রলিং বোটের মাধ্যমে নির্বিচারে মাছ শিকার করায় সমুদ্রে মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মৎস্য আহরণে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মাছ শূন্য হয়ে পড়বে সমুদ্র।


নীতিমালা অনুযায়ী, ৪০ মিটার গভীরতার কম পানিতে মাছ শিকার করতে পারবে না ট্রলিং বোট। কিন্তু এর তোয়াক্কা না করেই বঙ্গোপসাগরে ট্রলিং বোট দিয়ে মাছ শিকার করায় ভেস্তে যাচ্ছে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের সকল পরিকল্পনা। নিষিদ্ধ ট্রলিং বোট নিয়ে বিপাকে পড়েছে মৎস্য বিভাগও। মালিকরা ট্রলিং বোট চলাচলের বিষয়ে রিট আবেদন দাখিল করায় কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারছে না মৎস্য বিভাগ। সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ানো ট্রলিং বোটগুলোর মধ্যে বরগুনার অন্তত ৫০টি বোট রয়েছে।


পাথরঘাটার জেলে ইসমাইল বলেন, ‘ট্রলিং বোট দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরায় এখন সমুদ্রে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যান্ত্রিক এ পদ্ধতির মাধ্যমে সব প্রজাতির এবং সব আকৃতির মাছ ধরা হচ্ছে। তারপর বড় মাছগুলো রেখে দিয়ে ছোট মাছ মেরে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তাই ছোট মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না, এর ফলে মাছ উৎপাদনের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার যে নিষেধাজ্ঞাগুলো দিচ্ছে তা কোনো কাজে আসছে না।’


আরও পড়ুন: ট্রলিংয়ে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, মাছ সংকটের আশঙ্কায় মৎসজীবীরা


সালাম নামের আরেক জেলে বলেন, ‘যেসব জেলেরা বৈধ প্রক্রিয়ায় সমুদ্রে মাছ শিকার করে, তারা মাছ না পাওয়ায় দিন দিন লোকসানে পড়ছে। এজন্য দায়ী ট্রলিং বোট। এই বোট বন্ধ করতে না পারলে সমুদ্র মাছ শূন্য হয়ে পড়বে।’


এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মৎস্য গবেষক বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ট্রলিং বোট দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার করায় সমুদ্রে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি এই বোটের অযাচিত ব্যবহার মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করছে। এর ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’


এ সময় মাছের উৎপাদন ও আহরণ স্বাভাবিক রাতে ট্রলিং বোট দ্রুত বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।


এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, ‘ট্রলিং বোট দিয়ে সমুদ্রে মাছ শিকার করার আবেদন জানিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছেন মালিকরা। এ কারণে আমরা ট্রলিং বন্ধের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তারপরও আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। খুব শীঘ্রই রিট আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। তারপর আমরা পুরোদমে ট্রলিং বন্ধের জন্য অভিযান শুরু করবো।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন