সমাজে ভালো গুণের দুর্ভিক্ষ চলছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

৪ সপ্তাহ আগে
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, ‘সমাজে ভালো গুণের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে আদব-শিষ্টাচারের ব্যাপারে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত শিষ্টাচারের অভাব আজ দৃষ্টিগোচর।’

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে যশোর পুলেরহাটে আদ-দীন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত মাহফিলের তৃতীয় দিন বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

 

তিনি অভিযোগ করেন, একটি গোষ্ঠী পশ্চিমা সংস্কৃতি বাংলাদেশে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তারা গোপনে ইসলামের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

 

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ, প্রচার ও বাস্তবায়ন। ঘরে-বাইরে, সংবিধানে, আইনসভায় এবং সর্বক্ষেত্রে কুরআনের শিক্ষার প্রয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমেই ভিনদেশি পশ্চিমা সংস্কৃতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা সম্ভব।’

 

আরও পড়ুন: নতুন বছরে যে দোয়া পড়বেন

 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ‘শব্দ সন্ত্রাস’ এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যত্রতত্র হর্ন বাজানো, থার্টি ফার্স্ট নাইটের নামে তরুণ সমাজের ভিনদেশি সংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণ—এগুলো আমাদের সমাজের জন্য অশুভ সংকেত। এত প্রচারণা ও সতর্কতা সত্ত্বেও থার্টি ফার্স্ট নাইটে শব্দ সন্ত্রাসে মেতে উঠেছে কিছু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। এতে শত শত মানুষের কষ্ট হয়েছে।’

 

ধর্ম, রাজনীতি বা বিনোদনের নামে শব্দ সন্ত্রাসকে কোনোভাবেই সভ্য সমাজের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না বলে মন্তব্য করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভিনদেশি অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধে সচেতন হতে হবে এবং এই প্রবণতা থামাতে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’

 

একই মাহফিলে জনপ্রিয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘মানব সম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। একটি দেশের মানুষের জ্ঞান, তাদের দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়, বাড়িয়ে দেশের উন্নয়ন করা যায় এটাই হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়নের মূল কথা। মানবসম্পদ হচ্ছে একটি দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী পুঁজি। প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদের চেয়েও দামি সম্পদ হচ্ছে মানবসম্পদ। আল্লাহপাক দয়া করে আমাদের এই মানবসম্পদ দিয়েছেন। এই মানুষগুলোকে সোনার মানুষ বানাতে হবে। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। তাই মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। যথাযথভাবে তাদের গড়তে হবে।’

 

রসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনী থেকে মানবসম্পদ ব্যবহারের উদাহরণ টেনে আজহারী বলেন, আমরা যদি মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারি বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে দিতে পারবো। প্রতিটি মানুষ অনন্য। যত্ন নিলে, যথাযথ পরিচর্যা করলে মানুষ বিশ্বজয় করতে পারে। আমাদের হাফেজ, ক্রিকেটার, তৈরি পোশাক শিল্প অনেক কিছু সেরা। আমাদের আরও অনেক কিছু সেরা আছে, কিন্তু আমরা তাদের পরিচর্যা করতে পারি নাই। মানুষের অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’

 

আরও পড়ুন: ওয়াজ-মাহফিলে যাওয়া নিয়ে যে সতর্কতার কথা জানালেন আজহারী

 

তিনি বলেন, ‘আমি ইউনূস সরকারকে বলবো অল্প সময়ের জন্য আপনারা এসেছেন। সংস্কারও করতে হবে আবার নির্বাচন করতে হবে। সব সংস্কার হয়ত করতে পারবেন না। যতটুকু পারবেন এর মধ্যে আমাদের যে হিউজ ম্যান পাওয়ার, মানবসম্পদ এটাকে ডেভেলপমেন্ট করে যেতে হবে। আপনারা যেটা পারবেন না সেটাকে পরবর্তী নির্বাচিত গভর্মেন্টের কাছে রেখে যেতে হবে।’

 

প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে আজহারী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করে। তাদের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের শ্রমের দাম সবচেয়ে কম। তারা অ্যাম্বাসিতে গুরুত্ব পায় না, এয়ারপোর্টে গুরুত্ব পায় না। এই সরকার অবশ্য তাদেরকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের অদক্ষ শ্রমিককে যখন দুবাই পাঠায় অল্প বেতন পায়। ইন্ডিয়ানরা দক্ষ শ্রমিক পাঠায় বলে তারা তিন গুণ বেতন পায়। আমরা আমাদের শ্রমিককে আর অদক্ষভাবে পাঠাতে চাই না। দক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে রেমিটেন্সের বন্যা বইয়ে দিতে চাই।’

 

আজহারী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকায় সচল থাকে আমার দেশের অর্থনীতির চাকা। তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা পেয়েছিলাম ফ্রিডম ফাইটার মুক্তিযোদ্ধা আর আমার প্রবাসী ভাইয়েরা হচ্ছে রেমিটেন্স ফাইটার। আমাদের এই জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। সরকার ও অভিভাবককে সন্তানদেরকে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের এই জনসংখ্যা জনসম্পদের রূপান্তরিত হবে। আমাদের সরকারের তত্ত্বাবধানে ১৮ কোটি জনগণ দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হোক এটাই আমরা চাই।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন