সন্তানের সঠিক শিক্ষা-দীক্ষার গুরুত্ব

১ সপ্তাহে আগে
সন্তান মানুষ জীবনের অন্যতম বড় আশীর্বাদ। তারা আমাদের সুখের কারণ এবং দুনিয়ায় জীবনের সৌন্দর্য। সন্তানদের সঠিক দিকনির্দেশনা ছাড়া এ আশীর্বাদ অনর্থক হয়ে যেতে পারে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে সন্তানদের সঠিক শিক্ষাদীক্ষা ও লালনপালনের গুরুত্ব এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

সন্তান আল্লাহর দান ও জীবনকে পূর্ণতা দানকারী


সন্তান হলো আল্লাহর বিশেষ দান ও দুনিয়ার জিনত, যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। (সুরা আল-কাহফ, আয়াত ৪৬)

 

আরও পড়ুন: মেনিনজাইটিস কী, ওমরাহ যেতে এ টিকা কেন বাধ্যতামূলক?


 

নবী-রসুলগণ সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। যেমন, ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সৎপুত্র দান কর। (সুরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০০)


তাই সন্তানকে কেবল আল্লাহর এক দান মনে করেই থেমে থাকলে চলবে না; বরং তাদের সঠিক শিক্ষাদীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সন্তানদের সঠিক শিক্ষাদীক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে বাবাকে। কোরআনে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন,

 

তোমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন মানুষ এবং পাথর। (সুরা আত-তাহরিম, আয়াত ৬)

 

হাদিসে নবী (সা.) বলেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, এবং তোমাদের অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

 

সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষার জন্য বিশেষ নির্দেশনা


১. তাওহিদের শিক্ষা: সন্তানদের প্রথমেই তাওহিদের শিক্ষা দিতে হবে। তাদের শেখাতে হবে, আল্লাহই একমাত্র প্রভু, যার ইচ্ছায় সবকিছু ঘটে। নবী (সা.) বলেছেন,
 তোমাদের সন্তানদের প্রথমে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' শেখাও। (মুসনাদে হাকিম)

 

২. কুরআনের শিক্ষা: সন্তানদের কুরআন পাঠে আগ্রহী করে তুলুন। নাযেরা শেখানো, সুরাগুলো মুখস্থ করানো এবং হাফিজ বানানো অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ। নবী (সা.) বলেছেন,

 

যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং এর উপর আমল করে, তার পিতামাতাকে এমন একটি মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের থেকেও উজ্জ্বল। (আবু দাউদ)

 

৩. নামাজের প্রতি গুরুত্ব: সাত বছর বয়স থেকে সন্তানদের নামাজের নির্দেশ দিন এবং দশ বছর হলে তাতে অবহেলা করলে শাসন করুন। নবী (সা.) বলেছেন,

 

নিজে নামাজ পড়ুন এবং পরিবারকে নামাজের আদেশ দিন। (সুরা ত্বহা, আয়াত ১৩২)

 

৪. দুনিয়াবি ও দ্বিনের ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা: সন্তানদের দুনিয়াবি শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামের মৌলিক বিষয়, নবী (সা.)-এর জীবনচরিত এবং ইসলামী ইতিহাস শেখাতে হবে। শুধু দুনিয়াবি সফলতা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আখিরাতের জবাবদিহি কঠিন হবে।

 

৫. পর্দা ও শালীনতার শিক্ষা: বিশেষ করে মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই শালীন পোশাক পরতে অভ্যস্ত করুন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, তোমরা তাকওয়ার পোশাক ধারণ করো। (সুরা আরাফ, আয়াত ২৬)

 

৬. সময়ের সঠিক ব্যবহার: সন্তানদের সময়ের অপচয়, বিশেষ করে খেলা-ধুলা বা অপ্রয়োজনীয় কাজে অতিরিক্ত সময় ব্যয় থেকে বিরত রাখুন।

 

৭. খারাপ অভ্যাস থেকে দূরে রাখা: গালি-গালাজ, মিথ্যা বলা, চুরি, এবং অশ্লীলতা থেকে সন্তানদের বিরত রাখুন।

 

আরও পড়ুন: নতুন বছরে যে দোয়া পড়বেন


সন্তানদের সঠিক শিক্ষাদীক্ষা এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব। যদি আমরা সন্তানদের দ্বিনের পথে পরিচালিত করতে পারি, তবে তাদের নেক আমলের সুফল আমাদের মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ আমাদের সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার তৌফিক দিন।

 

মূল: ড. মুহাম্মদ নাজিব কাসেমি, সাম্ভালি, অনুবাদ: মুফতি আবদুল্লাহ তামিম

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন