আয়ুর্বেদ প্রধানত বিভিন্ন ঔষধির জন্য প্রসিদ্ধ। ভেষজ চিকিৎসায় এর কদর অনেক। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘাস জাতীয় এ উদ্ভিদের শিকড় মানুষের শরীরের জন্য উপকারী।
নাগরমোথা দেশ বিদেশে নানা নামে পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম সাইপেরাস রোটান্ডাস। ইউনানি শাস্ত্রে নাগরমোথা ‘সাদ-ই-কুফি’ নামেও পরিচিত। আর সাধারণ মানুষ এটিকে মুথা, মুস্তা, বাদাম ঘাস, জাভা ঘাস নামে চেনে।
নাগরমোথা মূলত হালকা বালুময় ও দোআঁশ মাটিতে জন্মে। আফ্রিকা, ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ায় এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এটি দেখতে অনেকটা সরু, নরম আর লম্বাটে হয়ে থাকে। ঠান্ডা আর তিক্ত স্বাদের নাগরমোথা উদ্ভিদটিতে সাধারণত ফুল আসে জুলাই মাসে। আর এতে ফল আসে ডিসেম্বরের শেষ দিকে।
উপকারিতা
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে, নাগরমোথার উপকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর এত ভেষজগুণ যে বলে শেষ করা যাবে না। ভারতীয় আয়ুর্বেদ ওয়েবসাইট ডিপ আয়ুর্বেদ-র প্রতিবেদন অনুসারে আসুন এক নজরে জেনে নিই, নাগরমোথার কিছু উল্লেখযোগ্য গুণের কথা-
১. সকালে নাগরমোথা খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর হয়।
২. বদহজম, আলসার, পেট ফাঁপা,পেট ফুলে থাকা চিকিৎসায় এটি উপকারী।
৩. বমি বমি ভাব, হজমে সমস্যা, পেটের নানা পীড়া, ডায়রিয়া বা ক্ষুধামন্দায় নাগরমোথা সেবন করা যায়।
৪. ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে নাগরমোথা।
৫. ত্বকের নানা সমস্যা যেমন এজমা, একনি, ব্রণ ইত্যাদিতে ভালো কাজ করে।
৬. এতে রয়েছে অ্যান্টি-এজিং ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে কাজ করে।
৭. মাথার ত্বক ও চুলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারে।
৮. জয়েন্টের ব্যথা কমাতে এটি দারুণ কাযকরী।
৯. শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের করে এবং যেকোনা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
১০. জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, কাশি এবং ফ্লু সংক্রমণ ভালো করে।
আরও পড়ুন: সকালে খালি পেটে আখরোট খেলে কী হয়?
১১. মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে।
১২. স্তনের কালশিটে ভাব দূর করে।
১৩. শ্বাসকষ্টের সমস্যা, অতিরিক্ত পিপাসা পাওয়া, দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ, চোখের দৃষ্টিগত সমস্যা, টিবি বা যক্ষ্মা রোগে এটি ব্যবহৃত হয়।
১৪. . ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের বাত ব্যথা কমায়।
১৫. স্ট্রেস কমায়, মানসিক শান্তি বৃদ্ধি করে।
১৬. কিডনি ও মূত্রনালীর সমস্যায় ব্যবহার করা হয়।
১৭. রক্তে কোলেস্টেরল ও পিত্তের সমস্যা, পাইলস,মাথা ব্যথা, হৃদ্রোগ, কুষ্ঠরোগ প্রতিরোধে নাগরমোথা কার্যকরী।
১৮. যাদের কৃমি সমস্যা আছে, কলেরা বা জন্ডিসের সমস্যায় ভুগছেন, গনোরিয়া, সিফিলিস কিংবা মৃগী রোগের মতো জটিল রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত নাগরমোথা সেবন করতে পারেন।
১৯. ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
২০. হঠাৎ কোনো পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতেও এর রস দারুণ কাজ করে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: অ্যানথ্রাক্স রোগের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা
সতর্কতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক ৫ গ্রাম চূর্ণ কিংবা ২০ মিলি রস বা ক্বাথের চেয়ে বেশি সেবন করা একদমই উচিত নয়। গর্ভবতী মহিলা এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।
ব্যবহারবিধি
নাগরমোথার শিকড় বা বাদামের শিকড়ের গুঁড়ো ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১ চা চামচ নাগরমোথা গুড়া ১ গ্লাস (৩০০ মিলি) গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এবং রাতের খাবারের ৩০ মিনিট পর পান করুন।
]]>