গত ২৪ এপ্রিল আটাবের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কার্যনির্বাহী সদস্যপদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগও করেন নড়িয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী সবুজ মুন্সী। অভিযোগে বলা হয়েছে, আটাব সদস্যদের বিদেশে ফেম ট্রিপের নামে বিভিন্ন সময় সায়মন ওভারসীজ ও সায়মন হলিডেজের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করে আসছেন সংগঠনটির সভাপতি ও মহাসচিব।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত নিজেদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আটাব বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সিসমূহের একমাত্র বাণিজ্য সংগঠন। আটাব ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশের সকল বৈধ ও সরকার নিবন্ধিত বর্তমানে প্রায় চার হাজার ট্রাভেল এজেন্ট সদস্যের সার্বিক কল্যাণে প্রতিনিধিত্ব করছে। এছাড়াও আটাব বাংলাদেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের সুষ্ঠু উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন দফতর ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগী ও অংশীজন হিসেবে সুচারুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
আরও পড়ুন: আটাব সভাপতি-মহাসচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সদস্যের পদত্যাগ
আটাব এয়ার টিকিটের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম টিকিট সংকট ও টিকিট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে, যা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়। এয়ার টিকিটের সিন্ডিকেট ভেঙে টিকিটের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ১১ই ফেব্রুয়ারি একটি পরিপত্র জারি করে, এক্ষেত্রে আটাবের বর্তমান কমিটি সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করে।
এ কারণে এয়ার টিকিট সিন্ডিকেটকারী দুষ্কৃতি মহল সরকারি পরিপত্র জারির পর সিন্ডিকেশন করার সুযোগ পাচ্ছে না এবং ব্যবসায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টিকিট মূল্যবৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারছে না। ফলে তারা বর্তমান আটাব কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিলের জন্য বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছে। বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিবের নামে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, লোক দেখানো নির্বাচন, জাল ভোট, সিন্ডিকেট গঠন, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য তারা সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
সিন্ডিকেট চক্রের উদ্দেশ্য, আটাব ও বর্তমান কমিটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং নির্বাচিত কমিটিকে বিতর্কিত করে তাদের আটাব থেকে সরিয়ে সিন্ডিকেট পুনর্বাসন করা। তারা আটাবের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে দায়ের করেছে তার যথাযথ জবাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আটাব প্রমাণসহ প্রদান করেছে।
বাণিজ্যিক সংগঠনের সদস্যদের কল্যাণ ও কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য আটাব-এর বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিবকে ট্রাভেল ট্রেড সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থা, মন্ত্রণালয়, দফতর, অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় যা তাদের দায়িত্বের অংশ। আটাব সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সভায় উপস্থিত ছিলেন, যেখানে আদতে সভাপতি একজন ব্যবসায়িক সংগঠন নেতা হিসেবে এফবিসিসিআই এর প্রেশারে হাজারো অন্যান্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে সভায় অংশ নিয়েছিলেন যেখানে তার কোন বক্তব্য ও ভূমিকা ছিল না।
আটাব সভাপতি ও মহাসচিব যদি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০২৪ সালের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয় লাভ করতেন তবে বিগত সরকার পতন এর পরপরই তারা বিগত সরকারের মদদপুষ্ট অন্যান্যদের মত দেশ ছেড়ে পালাতেন। আজ অবধি এই নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বাকি দুটি প্যানেল প্রার্থী বা সমর্থকদের পক্ষ থেকে ও কোন অভিযোগ হয়নি। আটাব নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। আটাবের প্রচেষ্টায় সরকার কর্তৃক নির্দেশনায় সিন্ডিকেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটাবের কমিটির জয়লাভের ১৪ মাস ও সরকার বদলের ৮ মাস অতিবাহিত পর আটাবের কমিটির নামে এহেন অভিযোগ যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা বলা বাহুল্য।
আরও পড়ুন: এয়ার টিকিট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আটাবের প্রতিবাদ
আটাব মহাসচিবের বিরুদ্ধে ফেম ট্রিপের নামে অর্থপাচারের অভিযোগও সত্য নয়। প্রতিবেদনে উপস্থাপিত এমন কোনো অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেনি। আটাবের সকল খাত এ অর্থ ব্যয়ের সঠিক হিসাব সকল খরচ বার্ষিক অডিট করা হয় এবং অডিট রিপোর্ট বই বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যদের সামনে উপস্থাপন ও অনুমোদন হয়।
কুয়েত ভিসা প্রসেসিংয়ে সিন্ডিকেট গঠনের অভিযোগও ভিত্তিহীন। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান আটাবের সদস্য নন। এক্ষেত্রে বিদেশি দূতাবাস নিজস্ব প্রক্রিয়ায় এজেন্সি নির্ধারণ করে। আটাবের নামে এসব অভিযোগ দায়েরকারী 'আটাব সংস্কার পরিষদ' এর নিজেরই কোনো নিবন্ধন বা বৈধতা নেই। এ গোষ্ঠীর অন্যতম মুখপাত্র গোফরান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা আইনের পরিপন্থি।
গোফরান চৌধুরী নিজে বিগত সরকারের সমর্থক ও সক্রিয় কর্মী হয়ে রাজনৈতিক সংযোগকে হাতিয়ার করে আটাবকে জিম্মি করতে চাইছেন। তার নামে আটাবের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। আটাব সবসময় নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নিয়মে নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিল না এবং এখনো নয়।
]]>