ঘটনাটি ঘটে রংপুর মহানগরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। তবে ঘটনার ১৮ দিন পার হলেও প্রধান শিক্ষক কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি। প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আহম্মদের দাবি, বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাকে বিষয়টি জানানো হয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ইমতিয়াজ আহম্মদ হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী (অ্যাডহক) কমিটির আহ্বায়ক হন। তখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ওই কমিটি বিলুপ্ত হলে গত ১৮ জুলাই তিনি বাগছাসের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক হন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৩০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, ৪ সেপ্টেম্বর টিফিন শেষে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস চলাকালে ইমতিয়াজ আহম্মদ মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে গিয়ে একে একে কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল জানতে চান। যেসব শিক্ষার্থী ‘অকৃতকার্য’ হয়েছে, তাদের দাঁড় করিয়ে বেত দিয়ে মারধর করেন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকরা কোনো প্রতিবাদ জানাননি।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, ‘ক্লাস চলাকালীন সভাপতি বেত হাতে ঢুকে বলেন, কে কে ফেল করছো, দাঁড়াও। আমরা দাঁড়ালে একে একে ডেকে মারেন। ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরাও মার খেয়েছে। শরীর লাল হয়ে গেছে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মারতে মারতে বেত ভেঙে ফেলেন।’
আরও পড়ুন: বাগছাস মব সৃষ্টি করে শিবিরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে: মাজহারুল ইসলাম
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, বই দেরিতে দেয়া ও নতুন পাঠ্যক্রমের কারণে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা কঠিন ছিল। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। কিন্তু সভাপতি তা শোনেননি, বরং গরু পেটানোর মতো করে মারধর করেন।
অভিভাবকদের দাবি, সেদিন পঞ্চাশের বেশি শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। এর মধ্যে ১০-১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে ইমতিয়াজ আহম্মদ বলেন, ‘আমি ছয় মাস ধরে স্কুলে পরিশ্রম করছি, বাচ্চারা যেন ভালো ফল করে। তাই একটু রাগারাগি করেছি, শাসন করেছি। ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো অভিযোগ নেই।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমি এলাকার বড় ভাই। বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তবে এটি মীমাংসা হয়েছে।’
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ ঘটনায় রংপুরের পরশুরাম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ইমতিয়াজ সভাপতি হিসেবে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসন করেছিলেন। একজন অভিভাবক অনলাইনে জিডি করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বিদ্যালয়ে গিয়েছিল।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সম্মতিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।’ তবে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওটা কিছু না। সভাপতি এসে বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার কথা বলেছেন।’
রংপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এটি নিষিদ্ধ। প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছু জানাননি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
]]>