শৈশব হারিয়ে অপরাধ জগতে পথশিশুরা

১ সপ্তাহে আগে
চরম অনাদর, অবহেলা আর নিষ্পেষণে বড় হচ্ছে ঢাকার পথশিশুরা। বাবা-মায়ের যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠা এসব শিশুদের রাজপথে রাত কাটে ঘুমের আকুতিতে। দুর্বিষহ জীবনে পেটের তাগিদে তারা শুধু মরণনেশায় মত্তই হচ্ছে না, ডুবছে অন্ধকার জগতে, হয়ে উঠছে অপরাধের হাতিয়ার।

দুরন্তপনার গল্পে উড়ন্ত পাখির মতো মুক্ত আকাশে ডানা মেলা। কিন্তু আকাশের আর আকাশে ওড়া হয়ে উঠলো কই? পথই যার ঘর-বঞ্চনার বৃত্তে আটকা যে জীবন, সেখানে ক্লান্ত-ঘামে ভেজা মলিন মুখই যেন নিঃশব্দ সংগ্রামের এক নাম।

 

আদর মেলেনি বাবার। তবে মায়ের স্পর্শ ভোলেনি আকাশ। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ঠাঁই হয়নি আপনজনের কাছে। এরপর পথের মাঝেই খুঁজে ফেরা আপন ঠিকানা। অভিমান সঙ্গী করে যাদুর শহরে পা ফেলা ছোট্ট এই শিশুর সামনে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি।

 

আকাশ বলে, ‘নানু আমাকে বলে, তোর আব্বু-আম্মু মারা গেছে এবার তুই চলে যা। নানু রাতেই আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরদিন সকালে এক আংকেল আমাকে ট্রেনে তুলে দেন। এরপর থেকে আমি রেললাইনে থাকি।’

 

এই গল্প বাংলাদেশের পথে পথে সবখানেই। যারা জন্ম নেয় সমাজের ছায়ায়, কিন্তু নিয়তির নির্মমতায় বেড়ে ওঠে আলো-ছায়ার টানাপোড়েনে। গতির শহরে কী দিন, কী রাত লড়তে হয় পেটের দায়ে। শৈশব হারিয়ে একসময় তারা পা বাড়ায় অপরাধ জগতে।

 

গবেষণা বলছে, ৫৮ শতাংশ পথশিশু কোনো না কোনোভাবে মাদকাসক্ত। রাজধানীতেই ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। আর ৪৬ শতাংশ শিশু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে বাধ্য হয়েই।

 

অপরাধবিজ্ঞানী শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘পথশিশুদের অনেকেরই নেই পারিবারিক জীবন। এই সুযোগে পরিবারহীন শিশুদের দিয়ে অপরাধ কিংবা মাদক কারবার করিয়ে অনেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অংকের টাকা। কোনো শিশু চুরি-ছিনতাই কিংবা কোনো অপরাধ করলে তাকে যে উন্নয়ন কেন্দ্রে নেয়া হবে, সেখানে তার পুনর্বাসনের জন্য যে সুযোগ সুবিধা দরকার সেটা নেই।’  

 

আরও পড়ুন: মোবাইল স্কুল দেখলেই ছুটে আসে পথশিশুরা

 

সমাজ বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার প্রশ্ন পথশিশুদের নিয়ে রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন, এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে, রাষ্ট্রের কোনো পলিসি প্রোগ্রাম রয়েছে কি না? আমরা জানি বেসরকারি কিছু কিছু উদ্যোগ রয়েছে। তবে এগুলো টেকসই করার ব্যাপারটা রাষ্ট্রের কাছে।’

 

যদিও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজধানীতে পথশিশুদের পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে দুটি। একটি কমলাপুরে, অন্যটি কারওয়ান বাজারে। তবে এই দুই সেন্টারের অবস্থাও অনেকটাই নাজুক। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প পরিচালিত করছে সমাজসেবা অধিদফতরও।

 

সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘ঢাকায় তিনটি এবং রংপুরে একটি শিশু সুরাক্ষা হাব রয়েছে। যেখানে ৩৫ শিশুকে রাখতে পারি। পথশিশুদের এই হাবে নিয়ে আসি। খাবার থেকে শুরু করে তাদের বিভিন্ন ট্রেনিং দিয়ে থাকি।’

 

সরকারি বেসরকারি এত উদ্যোগ নিলেও প্রশ্ন থেকেই যায়, এরপরও কমছে কি পথশিশুর সংখ্যা?

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন