শীতকালই দলবদলে যাদের দিকে নজর

৪ সপ্তাহ আগে
নতুন বছরের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই খুলে গেল শীতকালীন দল বদলের উইন্ডো। ইউরোপিয়ান ফুটবল মৌসুমের অর্ধেক প্রায় শেষ। দলগুলোর সামনে সুযোগ দলের দুর্বলতার জায়গাগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে খেলোয়াড় কিনে পূরণ করার। বুধবার (১ জানুয়ারি) থেকেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, জার্মানির বুন্দেসলিগা এবং ফ্রান্সের লিগ ওয়ানের শীতকালীন দলবদলের বাজার খুলবে। স্পেনের লা লিগা ও ইতালির সিরি আ'র দলবদল শুরু হবে তার ২৪ ঘণ্টা পর। সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এবারের শীতকালীন দলবদলের বাজার বেশি জমজমাট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্লাবগুলোর প্রয়োজন এবং বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়ে আগ্রহ থাকায় নজর রাখতে হবে দলবদলের বাজারে।

ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে আগের চেয়ে ম্যাচের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খেলোয়াড়দের ওপর ধকল বেশি পড়েছে। যার প্রমাণ মৌসুমের প্রথমার্ধেই পাওয়া গেছে। টানা চারটি প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতা ম্যানচেস্টার সিটি এবার ইনজুরির কারণে ধুঁকছে। আর্সেনালও ইনজুরিতে বেশ নাকাল। আবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহ্যাম হটস্পারের মতো ক্লাবগুলো প্রত্যাশানুযায়ী পারফরম্যান্স করতে ব্যর্থ হওয়ায় দলের শক্তি বাড়াতে কোমর বেঁধে নামছে।


ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের বাইরে সৌদি আরব এবং তুরস্কও টাকার বস্তা নিয়ে বাজারে নামতে প্রস্তুত। সৌদি লিগের দলবদলের বাজারও ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত খোলা থাকবে। অন্যদিকে তুর্কি সুপার লিগে ১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেলোয়াড় কেনাবেচা করা যাবে।


আরও পড়ুন: নিবন্ধনে ব্যর্থ, ওলমোকে নতুন বছরে পাচ্ছে না বার্সা!


শীতকালীন দলবদলে যাদের ক্লাব বদলাতে পারে:


 

ইউনাইটেড ছাড়তে পাএন রাশফোর্ড। ছবি: সংগৃহীত


মার্কাস রাশফোর্ড: শীতকালীন দলবদলে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইংলিশ উইঙ্গার মার্কাস রাশফোর্ড। ইউনাইটেডের নতুন কোচ রুবেন আমোরিমের পরিকল্পনায় নেই ২৭ বছর বয়সী রাশফোর্ড। ক্লাব ছাড়তে আপত্তি নেই এই উইঙ্গারেরও। গত মাসের শুরুতেই গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ওল্ড ট্রাফোর্ডের বাইরে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত তিনি। টানা চার ম্যাচ স্কোয়াডের বাইরে থাকা রাশফোর্ডকে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে দলে রেখেছিলেন আমোরিম। কিন্তু ঘরের মাঠে ম্যাচটি হেরেছে রেড ডেভিলরা।


তবে সপ্তাহে ৩ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড বেতন পাওয়া রাশফোর্ডের চাহিদা পূরণে স্বক্ষম ক্লাব ইংল্যান্ডের বাইরে কমই আছে। ইউনাইটেডের সঙ্গে ৩ বছরের চুক্তি থাকায় তাকে বড় অঙ্কের দলবদলে ফি দিয়ে দলে নিতে আগ্রহী ক্লাব সেভাবে নেই। ইএসপিএন জানিয়েছে, সৌদি আরব এই ইংলিশ উইঙ্গারের সম্ভাব্য গন্তব্য।


ভিক্তর গিওকারেস: স্পোর্তিং সিপিতে খেলা এই স্ট্রাইকার এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা খেলোয়াড়। ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ গোল করা এই সুইডিশ চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে ২৭ গোল করেছেন, যার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে হ্যাটট্রিকও আছে। এই স্ট্রাইকারকে নিয়ে আগ্রহ আছে দুই ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং আর্সেনালের।


 

স্পোর্তিং সিপির ভিক্তর গিওকারেস দলবদলের বাজারের প্রধান আকর্ষণ। ছবি: সংগৃহীত


কিন্তু গিওকারেসকে দলে ভেড়াতে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড গুনতে হবে। শীতকালীন দলবদলে এতো অর্থ খরচ করে তাকে দলে ভেড়ানোর সম্ভাবনা কমই। কিন্তু রুবেন আমোরিম সিপি থেকে ইউনাইটেডে যোগ দেয়ার পর থেকেই ফর্ম হারিয়েছে ক্লাবটি। নতুন কোচ জোয়াও পেরেরা মাত্র ৬ সপ্তাহের মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন। ফলে কোনো বড় ক্লাব রিলিজ ক্লস ট্রিগার করলে ২৬ বছর বয়সী গিওকারেস দলবদলের ব্যাপারে ভাবতেই পারেন।  


আরও পড়ুন: স্পেনে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় মেসির বিনিয়োগ ২৭৮৪ কোটি টাকা


মার্টিন জুবিমেন্দি: লিভারপুলের দায়িত্ব গ্রহণের পর আর্নে স্লটের প্রথম লক্ষ্য ছিল রিয়াল সোসিয়েদাদের মিডফিল্ডার জুবিমেন্দিকে দলে টানা। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন দলবদলে এই স্প্যানিশ দল বদলাতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। লিভারপুল এখনও এই ২৫ বছর বয়সীকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী, তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকাও আছে। কিন্তু এই শীতকালীন দলবদলে ম্যানচেস্টার সিটিও জুবিমেন্দিকে দলে ভেড়ানোর লড়াইয়ে নামছে।


রদ্রির ইনজুরির কারণে মাঝমাঠ নতুন করে ঢেলে সাজাতে আগ্রহী পেপ গার্দিওলা। সে কারণেই জুবিমেন্দিকে চান এই স্প্যানিশ কোচ। কিন্তু রিয়াল সোসিয়েদাদের এই মিডফিল্ডারকে নজরে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদও। ফলে শীতকালীন দলবদলে চোখ রাখতেই হচ্ছে তার দিকে।


আন্তনি রবিনসন: ফুলহামে খেলা যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্যাক রবিনসন কোচ মার্কো সিলভার অধীনে নিজেকে এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছেন। তার দিকে নজর পড়েছে লিভারপুলের। কিন্তু ইএসপিএন জানিয়েছে, অ্যান্ড্রু রবার্টসনের দীর্ঘমেয়াদি বদলি হিসেবে রবিনসনকে সেভাবে ভাবছে না অলরেডরা। রবং তাকে দলে ভেড়ানোর দৌড়ে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি এবং আর্সেনাল। ফুলহ্যামের সঙ্গে ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকায় রবিনসনকে দলে টানতে বেশ ভালো অঙ্কের টাকাই খরচ করতে হবে আগ্রহী ক্লাবকে।


মিলোস কারকিজ: বোর্নমাউথের লেফটব্যাক কারকিজের দিকে চোখ রাখছে লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২১ বছর বয়সী কারকিজকে রবিনসনের চেয়ে ভালো অপশন হিসেবে মনে করলেও ভাইটালিটি পার্কে ২০২৮ সাল পর্যন্ত তার চুক্তি থাকায় কিছুটা দ্বিধায় ভুগছে ক্লাব দুটি। শীতকালীন দলবদলে তাই হাঙ্গেরির এই তারকার দলবদল নাও হতে পারে।


আরও পড়ুন: টানা তৃতীয়বার বর্ষসেরা আর্জেন্টিনা


অ্যান্টনি: ২০২২ সালের আগস্টে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডে এই ব্রাজিলিয়ানকে দলে ভিড়িয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু হতাশ করেছেন এই ২৪ বছর বয়সী। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল ফ্লপের তকমা লেগে গেছে এই উইঙ্গারের গায়ে। ৯৩ ম্যাচে মাত্র ১৪টি গোল করেছেন তিনি। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জানুয়ারিতেই ইউনাইটেড তাকে ক্লাব ছাড়া করতে চায়, ধারে কিংবা স্থায়ীভাবে। তার পরবর্তী সম্ভাব্য গন্তব্য তুরস্ক।


ক্রিস্টোফার এনকুনকু: ২০২৩ সালে ৫২ মিলিয়ন পাউন্ডে স্টামফোর্ড ব্রিজে যোগ দেয়ার পর থেকে মানিয়ে নেয়ার লড়াই করছেন এই ফরাসি। চেলসির কোচ এনজো মারসেকা গত মাসে বলেছিলেন, এনকুনকুর উচিত ক্লাবে থাকা এবং একাদশে জায়গা পেতে লড়াই করা। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যে খেলোয়াড়রা খুশি নয়, তারা যদি ক্লাব ছাড়ে।


চেলসির হয়ে এই মৌসুমে মাত্র ৩২৫ মিনিট খেলে ১টি গোল করেছেন এনকুনকু। শীতকালীন দলবদলে এনকুনকু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যেতে পারেন, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। 


 

মাত্র ছয় মাসেই দানি ওলমোর বার্সেলোনা অধ্যায় শেষ হয়ে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

 


দানি ওলমো: মাত্র ৬ মাস আগে ৫৫ মিলিয়ন ইউরোতে বার্সেলোনায় যোগ দিলেও ক্লাবটিতে ওলমোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ৩১ ডিসেম্বরের ডেডলাইন পেরিয়ে গেলেও ওলমোকে এখনও রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি বার্সা। লা লিগার ফিন্যানশিয়াল রেগুলেশন না ভেঙে ওলমোকে দ্রুত দলে রেজিশট্রেশন না করলে শীতকালীন দলবদলেই ফ্রি-এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ছাড়তে পারেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার সিটি এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আগ্রহ আছে ওলমোকে নিয়ে।


ব্রায়ান এমবেউমো: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং আর্সেনাল প্রিমিয়ার লিগে পরীক্ষিত স্ট্রাইকারের খোঁজে আছে। এই মুহূর্তে ব্রেন্টফোর্ডের এমবেউমো লিগের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হওয়ায় এবং ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির আর মাত্র ১৮ মাস বাকি থাকায় তার দল ছাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে ১০ গোল করে ফেলা ক্যামেরুনের এই স্ট্রাইকারকে ধরে রাখতে চায় ব্রেন্টফোর্ড। তবে ভালো অফার পেলে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখতে ক্লাবটি আপত্তি করবে বলে মনে হয় না।


 

সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিভা ডিবলিংকে দলে চায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। 


টাইলর ডিবলিং: ১৮ বছরের এ তরুণকে সাউদাম্পটন ধরে রাখতে লোভনীয় প্রস্তাব দিতে চাইলেও ক্লাবটির বাজে ফর্ম কাজটা কঠিন করে তুলছে। এই দলবদলেই ডিবলিঙ্গ ক্লাব ছাড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রুবেন আমোরিমের অধীনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নতুন করে দল সাজাতে চায়। সে জন্য ইউরোপের সেরা প্রতিভাদের দিকে নজর তাদের। স্বাভাবিকভাবেই ডিবলিংয়ের দিকেও তাদের নজর আছে।


আরও পড়ুন: মাত্র ৭ মাসেই ছাঁটাই হলেন রুনি


র‍্যান্ডাল কোলো মুয়ানি: ২০২৩ সালে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ৯৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কোলো মুয়ানিকে দলে ভেড়ায় পিএসজি। কিন্তু কোচ লুইস হেনরিকের অধীনে ক্লাবে মানিয়ে নিতে পারেননি এই ফরাসি। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৪ ম্যাচে মাত্র ২টি গোল করেছেন। গত মৌসুমেও ৪৪ ম্যাচে ১২ গোল করা এই স্ট্রাইকার এই শীতে দল বদলাতে পারেন। আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং চেলসি তার দিকে নজর রাখছে।


 

বুড়ো ক্যাসেমিরোকে ক্লাব ছাড়া করতে চায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ছবি: সংগৃহীত


ক্যাসেমিরো: নভেম্বরে আমোরিম ওল্ড ট্রাফোর্ডে আসার পর থেকেই ক্যাসেমিরো গুরুত্ব হারিয়েছেন। ফলে জানুয়ারিতে ধারে কিংবা স্থায়ীভাবে ক্লাব ছাড়তে পারেন তিনি। গত গ্রীষ্মে সৌদি আরব থেকে প্রস্তাব এলেও শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেডেই থেকে গিয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। তবে শীতকালীন দলবদলে তার ইউনাইটেড যাত্রার ইতি ঘটতে পারে।


বেন চিউয়েল: চেলসির কোচ এনজো মারেসকা গ্রীষ্মেই চিউয়েলকে নতুন ক্লাব খুঁজে নিতে বললেও সে সময় দল ব্লদলাতে ব্যর্থ হয়েছেন এই লেফট ব্যাক। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছেন এই ইংলিশ। জানুয়ারিতে তিনি দল ছাড়তে পারেন। আর সম্ভাব্য গন্তব্য প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটি। 
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন