কোভিডকালীন সময়ে যাত্রা শুরু করা রেডলাইনারের বয়স পাঁচ বছর। বড় প্রতিষ্ঠানের মতো শেয়ার বিক্রি করে মূলধন জোগান দেয়া তাদের জন্য কঠিন। তাই প্রতিষ্ঠানটি খুঁজছে বিকল্প পথ ক্রাউড ফাইন্যান্স। দ্যা রেডলাইনারের স্বত্বাধিকারী ফুয়াদুর রহমান বলেন, ‘এক লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। কিন্তু ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যারা চাকরি করছে বা যাদের ব্যবসা আছে, কিন্তু খুব অল্প প্রিন্সিপাল আছে, তারাও এতে অংশ নিতে পারছে।’
ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের দিকে ঝুঁকছে, সেখানে বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য রয়েছে বন্ড বাজার। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই কাঠামো এখনো শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। করপোরেট বন্ড মূলত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট সুদের বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া, এটি কোনো অংশীদারিত্ব বিক্রি নয়। বিশ্বে বন্ড বাজারের আকার ১৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যার বড় অংশীদার চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। অথচ বাংলাদেশের বন্ড বাজার বিশ্ব বাজারের এক শতাংশেরও কম।
আরও পড়ুন: ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড কী, কীভাবে কিনবেন?
অন্যদিকে, স্বল্পমেয়াদি আমানত থেকে দীর্ঘমেয়াদি বড় ঋণ দেয়ার কারণে ব্যাংক খাত আটকে পড়েছে খেলাপি ঋণের ফাঁদে। এর প্রভাব পড়ছে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে, যা এখন স্থবির। নির্বাচনের পর শুধু ব্যাংক খাতই পুরো সেবা ও শিল্পখাতের চাহিদা মেটাতে পারবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাব্বির খান বলেন, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাস এখন যেই অবস্থায় আছে, সেটি আরও জোরদার ও শক্তিশালী করা খুবই প্রয়োজন।’
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতকে খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকিপূর্ণ চর্চা থেকে বের হয়ে ক্ষুদ্র ঋণের দিকে নজর দিতে হবে। অন্যদিকে শিল্পখাতকে টিকিয়ে রাখতে শেয়ারবাজার ও বন্ড বাজারমুখী হতে হবে। বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বড় করপোরেট সেক্টরে যারা কাজ করছেন তাদের সিকিউরিটি মার্কেটের ওপর নির্ভর করতে হবে। বন্ডের মাধ্যমে লং টার্ম ফান্ড সংগ্রহ করতে হবে। তবে এর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সরকারি বন্ড মার্কেট, যা বাংলাদেশে নেই।’
অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্বাভাস বলছে, ২০৩০ সালে বৈশ্বিক বন্ড বাজার দাঁড়াবে ১৬০.৮ ট্রিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে ট্রেজারি বন্ড বা সরকারি বন্ড দখল করবে ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক কমিশনার আরিফ খান বলেন, ‘বন্ড কেনার চেয়ে লোন নেয়াটা সহজ। সুদের হারও বেশি পড়ে। আরেকটা কারণ হলো, একটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে যেখানে এক মাস লাগে, সেখানে একটি বন্ড প্রসেস করতে ন্যূনতম ছয় মাস সময় লাগে।’
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, শক্তিশালী বন্ড বাজার গড়ে উঠলে ভারসাম্য আসবে দেশের আর্থিক কাঠামোয়। নিরাপদ হবে সম্ভাবনাময় নতুন উদ্যোগ, একইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ খাতেও আসবে স্থিতিশীলতা।
]]>