নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে চলছে দেশের উৎপাদন খাত। বৈশ্বিক নানা ইস্যুতেও যোগ হয় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। সব বাধা সহজে মোকাবিলায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এক লাফে শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ১৫০ থেকে ১৮০ শতাংশ। এরপর শিল্পোদ্যোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা গেছে ঠিকই, কিন্তু শিল্পে যায়নি প্রতিশ্রুত গ্যাস।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘একদম বর্ধিত একটা মূল্য হয়েছে, এ মূল্যটা আমরা তো বহন করতে পারছি না। আবার আমরা গ্যাসও পাচ্ছি না। কস্টিংটা দুভাবে বাড়ছে– একটা হচ্ছে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে, আরেকটা হচ্ছে গ্যাস না পাওয়ার কারণে।’
এরমধ্যেই গেল ১৩ এপ্রিল আরেক দফা শিল্পখাতে নতুন সংযোগের বিপরীতে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। আর পুরান সংযোগের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে গুনতে হবে এই বাড়তি টাকা।
আরও পড়ুন: তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জামায়াতের
দেশের অর্থনীতির প্রাণ তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের হিসাব, এতে তাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে ৩ থেকে ৫ শতাংশ। যা রফতানি বাজার থেকে ছিটকে ফেলতে পারে বাংলাদেশকে।
ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘নতুন যিনি ব্যবসায় আসবেন, তার এটা যখন ডিফাইন্ড হবে, তখন তার ব্যবসার যে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা, সেটা কিছুটা কম থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৩৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে আমাদের উৎপাদনে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে ৩ থেকে ৫ শতাংশ।’
বিশ্ববাজারে যেমন প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে রফতানিমুখী শিল্প, তেমনি একেক কারখানায় গ্যাসের দাম একেক রকম হওয়ায় দেশের বাজার দখলে দেখা দেবে অরাজকতা; এমন শঙ্কাও তাদের।
বিটিএমএর সহসভাপতি সালেউদ জামান খান বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকের ইন্টারেস্টের হার বেশি। বিশ্বব্যাপী এলএনজির দাম কমেছে, এখন সর্বনিম্ন প্রাইস চলছে তেলের এবং গ্যাসের। সে সময় আপনারা মূল্য বাড়ালেন। এতে ভবিষ্যতে নতুন কোনো ফ্যাক্টেরি হবে না।’
গ্যাসের সংকট ও দাম বৃদ্ধিতে যখন বহুমুখী চাপে শিল্পখাত, তখন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্পবান্ধব জ্বালানি নীতি তৈরি করতে, দূর করতে হবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন- বিইআরসির দুর্নীতি।
আরও পড়ুন: দাম কমলো জ্বালানি তেলের, লিটারে কত?
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার যদি সেবা করে, এ খাতে মুনাফা হলে সবাই লুটপাট করে খায়। ইন্ডাস্ট্রি খাতে জ্বালানির মূল্য বাড়িয়ে দেয়া মানে, উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া, সেবা মূল্য বাড়িয়ে দেয়া। এতে ইন্ডাস্ট্রিগুলো বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না।’
আমদানি নির্ভর জ্বালানি থেকে বের হয়ে স্থানীয়ভাবে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞের।
ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘উৎপাদন মূল্যও বেড়ে যাচ্ছে, ভর্তুকিও বেড়ে যাচ্ছে। এতে ঘাটতি ও লোডশেডিংও বেড়ে যাচ্ছে।’