সংসদ সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি ঘিরে অসন্তোষ থেকে গত সপ্তাহে জাকার্তায় বিক্ষোভ শুরু করেন দেশটির শিক্ষার্থীরা। এই বিক্ষোভ দ্রুতই জাকার্তার বাইরে অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে শুরু থেকেই বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাকার্তায় পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিলে এক তরুণ নিহত হয়। আরও অর্ধশতাধিক আহত হন। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।
পরদিন শুক্রবার (২৯ আগস্ট) দক্ষিণ সুলাওয়েসি প্রদেশের রাজধানী মাকাসারে প্রাদেশিক সংসদ ভবনে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হন। এ ঘটনার পর পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বন্যা: লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন, তলিয়ে গেছে কবরস্থানও
এমন পরিস্থিতিতে চীনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে তা বাতিল করেন প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো। যা রোববার (৩১ আগস্ট) তার মুখপাত্র নিশ্চিত করেন।
এরপরই আইনপ্রণেতাদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো। রোববার জাকার্তায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে এক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সংসদের নেতারা জানিয়েছেন যে তারা সংসদের বেশ কয়েকটি নীতি প্রত্যাহার করবেন, যার মধ্যে রয়েছে সংসদ সদস্যদের ভাতার পরিমাণ এবং বিদেশ ভ্রমণ স্থগিতাদেশ।’
বিক্ষোভ নিয়ে প্রাবোয়ো বলেন, বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে হওয়া উচিত এবং যদি মানুষ সরকারি অবকাঠামো ধ্বংস করে বা বাড়ি লুট করে, তাহলে ‘রাষ্ট্রকে তার নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি বলেন, তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে দাঙ্গাবাজ ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন শুল্ক চাপে নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্কে নাটকীয় মোড়
তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান ও সুরক্ষা দেয়া উচিত। তবে আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে আইন পরিপন্থি তথা রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার লক্ষণ রয়েছে।’
সম্প্রতি একাধিক প্রতিবেদনে উঠে আসে, ইন্দোনেশিয়ার ৫৮০ জন সংসদ সদস্য গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মাসে ৫০ মিলিয়ন রুপিয়াহ (প্রায় ৩ হাজার ৭৫ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৮৮ টাকা) আবাসন ভাতা পাচ্ছেন।
এই ভাতা ইন্দোনেশিয়ার দরিদ্র অঞ্চলে প্রচলিত ন্যূনতম মজুরির প্রায় ২০ গুণ বেশি। বেশিরভাগ নাগরিকের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শিক্ষার্থীরা বিশাল পরিমাণ এই ভাতাকে অন্যায্য বলে দেখছেন। আর এ কারণেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন তারা।
‘গেজায়ান মেমাঙ্গগিল’ নামের একটি সংগঠন জানায়, সংসদ সদস্যদের বেতন কমানো, সরকারে দুর্নীতিবাজ অভিজাত শ্রেণি ও সামরিক-করেপারেটপন্থী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনই এই বিক্ষোভের মূল লক্ষ্য।