ইতালি- ইতিহাস, শিল্প, স্থাপত্য, ফ্যাশন আর কুইজিনের জন্যেও আছে পরিচিতি। তবে ক্রিকেট? ২২ গজের খেলার সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক জমেনি ইতালিয়ানদের।
এই তো গেল বছরের খবর। আদ্রিয়াটিক সমুদ্রের পাড়ে মনফালকোন শহরে ব্যাট-বলের এই খেলাকে নিষিদ্ধই করে দিলেন মেয়র। শহরে ক্রিকেট খেললেই গুনতে হবে ১০০ ইউরো জরিমানা। অভিবাসনবিরোধী কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ আন্না মারিয়ার মতে, ২২ গজের এই খেলা সৌন্দর্য নষ্ট করে তাদের শহরের।
এরপর সময়ের পরিক্রমায় ১১ই জুলাই, ২০২৫। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে ইতালিয়ানরা। ফুটবলে ব্যর্থ হওয়া আজ্জুরিরা, আপাতত বিশ্বকাপের আক্ষেপ মেটাতে পারে এই ক্রিকেট দিয়েই। কারণ ফুটবলে তো বাছাইপর্ব পার করতে পারেনি ৪ বারের বিশ্বজয়ীরা।
ইতালির এই অর্জন নতুন করে বিপ্লব ঘটিয়েছে দেশটার ক্রিকেটে। আর যে বিপ্লব এসেছে মূলত অভিবাসীদের হাত ধরে। যার অধিকাংশই এশিয়ান। বাংলাদেশ, ভারত কিংবা পাকিস্তান থেকে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইউরোপের এই দেশে।
আরও পড়ুন: ৮৬ বলে ২৪৫ রান তাড়া করে বুলগেরিয়ার রেকর্ড
ক্রিকেট বিপ্লবের সেই ছাপ স্পষ্ট জাতীয় দলে। কেউ ভারতীয়, কেউবা পাকিস্তানি কিংবা শ্রীলঙ্কান। আছে প্রোটিয়া, ইংলিশ, আর অস্ট্রেলিয়ান। জাতের মতো পেশাতেও বৈচিত্র্য। হাতেগোনা অল্প কিছু পুরোদস্তুর পেশাদার। বাকিদের জীবন যাপনে নির্ভরতা অন্য পেশায়।
ইতালির এই ইতিহাস রচনায় নানা মানুষ, নানাভাবে রেখেছে অবদান। কেউ স্কুল শিক্ষক, কেউ-বা ফিজিওথেরাপিস্ট। আজ্জুরিদের হয়ে ২২ গজে প্রতিনিধিত্ব করেন হোটেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীও।
ক্রিকেটারদের মতো বৈচিত্র্য কোচিং স্টাফেও। দলটার সাবেক কোচ আর ক্রিকেটার গ্যারেথ বার্গ এই সমন্বয়ে মূল ভূমিকা রেখেছেন। প্যানেলের ভিন্ন তিনজনের অভিজ্ঞতা আছে তিনটা ভিন্ন সহযোগী দেশকে বিশ্বকাপে তোলার।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে নবীন হলেও ইতালিয়ানদের ক্রিকেট ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো। ইতিহাসবিদদের মতে, নেপলসে হওয়া দেশটার প্রথম ক্রিকেট ম্যাচের বয়স ২০০ বছরের। এসি মিলান, জেনোয়া কিংবা তোরিনোর মতো ক্লাবগুলো ফুটবল পরাশক্তিতে পরিণত হবার আগেই শুরু করেছিলো ক্রিকেট কার্যক্রম ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশেই এসিসির সভা, অনলাইনে যুক্ত হবে ভারত!
রোমসহ দেশটার উত্তরাঞ্চলে ক্রিকেটের চলন বেশি। আনুমানিক ক্লাবের সংখ্যা ১০৮, ৩৫শ ক্রিকেটার জড়িত ব্যাট-বলের সঙ্গে। আর সব মিলিয়ে, ইতালিতে এই খেলাটা খেলে ৫০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ। এবার তারাই আসবে বিশ্বকাপের মঞ্চে। ভারত ও শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজনের বিশ্বকাপে নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে এ ক্রিকেটের মাধ্যমে।
]]>