শার্শায় ১৫ বছরে ১৬০ হত্যা, অর্ধেকই আ.লীগ নেতাকর্মী

৩ সপ্তাহ আগে
যশোরের শার্শা উপজেলায় গত ১৫ বছরে দলীয় প্রভাব বিস্তার, ঘাট-বাওড় দখল, মাদক কারবার, পারিবারিক কলহসহ নানা অপরাধে ১৬০ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। খুনের শিকারদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকও রয়েছেন।

এ ঘটনায় শার্শা থানায় ৭৩টি এবং বেনাপোল বন্দর থানায় ৮৭টি মামলা হয়। এসব মামলায় প্রায় ৩০০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও অধিকাংশ আসামি এখন জামিনে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একদিকে প্রিয়জন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে ন্যায়বিচার না পাওয়ায় স্বজনদের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।

 

তথ্য বলছে, শার্শায় হত্যার শিকার ১৬০ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ৭৭ জন, বিএনপির ২৬ জন, সাংবাদিক ১ জন এবং মাদক ব্যবসা ও পারিবারিক বিরোধসহ অন্যান্য ঘটনায় নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে ৫৬ জন।

 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্দর, ঘাট, বাওড় ও গরু খাটাল দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগেরই অধিকাংশ নেতা-কর্মী হত্যার শিকার হন। প্রতিশোধমূলক হত্যার শিকার হন বিএনপি নেতা-কর্মীরাও। স্বজনদের অভিযোগ, খুনিদের ভয় এতটাই তীব্র ছিল যে, অনেক ক্ষেত্রে নিহতকে শেষবার দেখার কিংবা দাফনের সুযোগও পাননি তারা। মামলা হলেও ন্যায়বিচার মেলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

ভারত সীমান্তবর্তী শার্শার কনেদাহ গ্রাম আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে গত ১৫ বছরে একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ বিএনপি কর্মী মুকুল খুন হন। এর আগে খুন হন তার বাবা বিএনপি কর্মী আব্দুল আজিজ, চাচা নুর ইসলাম মেম্বার ও মুজাম গাজী।

 

আরও পড়ুন: 
শার্শায় সরকারি চাল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে 
যশোরে বিএনপির দুপক্ষের মারামারি, আহত ১০

 

কনেদাহ গ্রামের রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ন্যায়বিচার পাইনি। বর্তমান সরকারের কাছে বিচার চাই।’

 

২০১৫ সালে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় পুটখালী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেককে। তার ছেলে আহসান হাবিব লিটন বলেন, ‘পিতার হত্যার ন্যায়বিচার চাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে।’

 

২০২২ সালের ১০ মে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হন স্থানীয় নেতা মগর আলী। তাকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন তার নাতি ইয়াসিন। নিহত মগর আলীর স্ত্রী বলেন, ‘আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়ে বাড়ির সামনে মহড়া দেয়। হত্যাকারীদের ভয়ে ছেলেরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। আমি একা ভিটেমাটিতে পাহারা দিচ্ছি।’

 

মানবাধিকার সংস্থা রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, ‘সামাজিক অবক্ষয় ও আইনের শাসনের অভাবে হত্যার মতো অপরাধ বাড়ছে।’

 

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম এবং বেনাপোল বন্দর থানার ওসি রাসেল মিয়া জানান, তারা নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে অতীতে দায়ের হওয়া মামলায় অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া, নতুন অপরাধ এড়াতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে পুলিশ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন