শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এবার প্রশাসন ক্যাডারে উল্লাস পাল

১ দিন আগে
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে নিজের অধ্যবসায় ও মেধার জোরে বাংলাদেশ প্রশাসন ক্যাডারে জায়গা করে নিয়েছেন শরীয়তপুরের উল্লাস পাল। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে এখন তিনি সাফল্যের উদাহরণ।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের কার্তিকপুর এলাকার বাসিন্দা উল্লাস জন্ম থেকেই দুটি হাত ও পা বাঁকা নিয়ে বড় হয়েছেন। হাঁটতে পারেননি স্বাভাবিকভাবে। পরিবারের অবিরাম সহযোগিতা আর ভারতের চিকিৎসার মাধ্যমে এক পায়ে অস্ত্রোপচার করিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেন তিনি।

 

তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় উল্লাসের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কার্তিকপুর পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্ষার দিনে বাবা প্রতিদিন স্কুলে পৌঁছে দিতেন। বাম হাতে লিখতেন তিনি। খেলাধুলা ভালোবাসলেও অংশ নিতে পারতেন না এ ছিল তার কষ্টের জায়গা।

 

২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে। সেখান থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেন। চাকরি খুঁজতে গিয়ে একের পর এক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। 

 

৪০তম ও ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪১তমতে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশ পেলেও থেমে থাকেননি। ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নড়িয়া সরকারি কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। তবে তার মূল লক্ষ্য ছিল প্রশাসন ক্যাডার, যা তিনি অর্জন করেন ৪৪তম বিসিএসে।

 

আরও পড়ুন: বিষ খাইয়ে দুই মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা বাকপ্রতিবন্ধী বাবার

 

উল্লাস পাল বলেন, ‘রেজাল্টের সময় নিজের রোল নম্বর মিলিয়ে দেখি প্রশাসন ক্যাডারে নাম এসেছে, তখন আনন্দে চোখে জল এসেছিল। আমার পরিবারও খুব খুশি। সমাজের অনেকে ঠাট্টা করলেও আমি কখনও দমে যাইনি।’

 

তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডার একটি জনকল্যাণমুখী ক্ষেত্র। আমি চাই মানুষের সেবায় কাজ করতে। সমাজের সবাই যেন শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।’ 

 

উল্লাসের সাফল্যে খুশি তার পরিবার, শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। মা আন্না রানী পাল বলেন, ‘ছেলেটা অনেক কষ্ট করে আজকের জায়গায় এসেছে। আমরা গর্বিত।’ 

 

বাবা উত্তম কুমার পাল বলেন, ‘ওর লেখাপড়ার আগ্রহ আর আমাদের ভালোবাসা মিলেই সে সফল হয়েছে।’ প্রতিবেশী রূপক পাল বলেন, ‘উল্লাস প্রমাণ করেছে প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়। সে আমাদের গর্ব।’

 

কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘উল্লাসের মতো মেধাবী, আত্মমর্যাদাশীল ছাত্র খুব কম দেখা যায়। ওর এই অর্জনে আমরা গর্বিত।’

 

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন