শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউক্রেনকে দেয়া ট্রাম্পের ‘চূড়ান্ত প্রস্তাবে’ কী আছে?

৩ সপ্তাহ আগে
রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউক্রেনকে নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবে রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে এবং ইউক্রেন এ প্রস্তাবের ব্যাপারে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে আশা করছে ওয়াশিংটন।

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেয়ার পর এই সংঘাতের অবসানে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। কয়েক দফার আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে রাশিয়া এখনও এ বিষয়ে সম্মতি জানায়নি। তবে এ নিয়ে পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) প্যারিসে এক বৈঠকে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের কাছে এক পৃষ্ঠার একটি নথি হস্তান্তর করে মার্কিন কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে ওই নথিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ বলে উল্লেখ করা হয়।

 

এরপর শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুই পক্ষ যদি শিগগিরই একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাবে। 

 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মর্কো রুবিও বলেন, শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর স্পষ্ট লক্ষণ না দেখা গেলে কয়েকদিনের মধ্যে মধ্যস্থতা থেকে সরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র। তার কথায়, ‘আমরা সপ্তাহর পর সপ্তাহ বা মাসের পর মাস ধরে চেষ্টা চালাব না। যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক ইস্যু আছে যেগুলোর ওপর নজর দেয়া উচিৎ।’

 

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিতে চাপে রাশিয়া-ইউক্রেন, প্রথমবার যে প্রস্তাব পুতিনের

 

অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদন মতে, ইউক্রেনকে দেয়া ট্রাম্পের খসড়া প্রস্তাবে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি এবং ২০২২ সালের পর রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনের প্রায় সব অঞ্চলকে অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে।

 

এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বড় ধরনের ছাড় দিতে হবে। যদিও এর আগে তিনি ক্রিমিয়া ও পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে রাশিয়ার দখল মেনে নেয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

 

অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ছাড় দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও তিনি আগে ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের মতো বিষয় যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি কাঠামোর অন্যান্য দিক যেমন, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি পূর্বে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

 

তবে ইউক্রেন ট্রাম্পের এই ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ মানবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন সরকারের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের বরাতে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, কিয়েভ এই প্রস্তাবকে অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখছে। ওই সূত্রের ভাষ্য, 'এই প্রস্তাবে রাশিয়া কী কী সুবিধা পাবে তা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন কী পাবে, তা অস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।'

 

ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী রাশিয়া যা পাবে

 

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাশিয়া অধিকৃত ইউক্রেনের কয়েকটি অঞ্চলের ‘আইনগত স্বীকৃতি’ এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। অর্থাৎ ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এবং খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার দখলদারিত্বকে কার্যত স্বীকৃতি দেয়া হবে। 

 

এছাড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে পারবে, তবে ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। আরও বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা হবে, বিশেষ করে জ্বালানি ও শিল্প খাতে।

 

প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেন যা পাবে

 

প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেনকে ‘একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দেয়া হবে। এটা কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এবং ইউরোপের বাইরের কিছু দেশ নিয়ে গঠিত একটি অস্থায়ী জোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে নথিতে এই শান্তিরক্ষী মিশনের কার্যপ্রণালি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অংশগ্রহণের কথাও উল্লেখ নেই।

 

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, খারকিভ অঞ্চলের যে ছোট অংশটি রাশিয়া দখল করে রেখেছে, সেটা ইউক্রেনের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া দিনিপ্র নদীপথে বাধাহীন যাতায়াতের নিশ্চয়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। দিনিপ্রো নদী দক্ষিণ ইউক্রেনের কিছু অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে যা যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন বরাবর পড়েছে। 

 

প্রস্তাবে ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য ক্ষতিপূরণ ও সহায়তার কথা বলা হয়েছে। তবে কোথা থেকে এই অর্থ আসবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু কেন্দ্র জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে এটি পরিচালনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় দেশেই বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।

 

নথিতে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র খনিজ চুক্তির উল্লেখ করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ট্রাম্প স্বাক্ষর করবেন বলে জানিয়েছেন।

 

পরিকল্পনা উপস্থাপনের পর পুতিন সামরিক অভিযান বন্ধ করার প্রস্তাব দিলেও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা এতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার দখলকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন তা প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত দিয়েছে ইউক্রেন।

 

এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার লন্ডনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। 

 

আরও পড়ুন: ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি না হলে সরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র, এবার বললেন ট্রাম্প

 

বৈঠকে উইটকফ ও রুবিওর পরিবর্তে ইউক্রেনে মার্কিন দূত কিথ কেলোগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দেবেন। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এদিকে চলতি সপ্তাহে মস্কো যাবেন উইটকফ। একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে’ রুবিও ও উইটকফ একসাথে কাজ করছেন।

 

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনীয়দের কাছ থেকে এমন সংকেত পাওয়া গেছে যে তারা বুধবারের লন্ডন বৈঠকে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা না নিয়ে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে চান। একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ফয়সালা হয়েছে যে সেক্রেটারি লন্ডনে যাবেন না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্য এবং ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।’ 

 

রুবিও টুইট করেছেন, তিনি যুক্তরাজ্যের সহকর্মীর সঙ্গে একটি ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনা করেছেন এবং লন্ডনে আলোচনা শেষে ‘ফলোআপ’ করতে আগ্রহী। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ‘আলোচনা চলছে এবং আশা করা হচ্ছে যে আমরা সঠিক দিকে এগোচ্ছি।’ 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন