শহীদকন্যা লামিয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: ডিএনএতে চাঞ্চল্যকর প্রমাণ, ৩ জনের সংশ্লিষ্টতা

১ সপ্তাহে আগে
শহীদকন্যা লামিয়ার সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। মামলায় দুই কিশোরকে আসামি করা হলেও, তদন্তে উঠে এসেছে তিনজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য। ডিএনএ টেস্টে মিলেছে চাঞ্চল্যকর প্রমাণ। তবে এখনো ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কিত লামিয়ার মা। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেছে পরিবার।

সরেজমিনে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় লামিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার পড়ার টেবিলটা এখনো সাজানো গুছানো। বই, খাতা, পেনসিল সব কিছুই আছে যথাস্থানে। শুধু নেই এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া সেই মেধাবী লামিয়া।


গত ১৮ মার্চ শহীদ বাবার কবরে দোয়া মুনাজাত শেষে বাড়ি ফেরার পথে পটুয়াখালীর দুমকিতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন কলেজছাত্রী লামিয়া। এ ঘটনায় লামিয়ার মা রুমা বেগম বাদী হয়ে সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী নামে দুই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়।


তবে গত ৬ মে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করলে সামনে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে আসে আরও এক কিশোরের নাম। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ থাকলেও ভিকটিমের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট ও আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী তিনজন জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।


আরও পড়ুন: শহীদ কন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলায় পলাতক ইমরান মুন্সি গ্রেফতার


পুলিশ জানায়, ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত ও অভিযুক্তদের ডিএনএ মিলেছে। এমনকি, গাছের শুকনা পাতার ওপরও ছিল অভিযুক্তের নমুনা।


এ বিষয়ে পটুয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজাদুল ইসলাম স্বজল জানান, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ভুক্তভোগী প্রথম ধর্ষণের শিকার হন তারই ঘনিষ্ঠ সহপাঠী ইমরান মুন্সীর হাতে। এরপর ঘটনাস্থলে আসে সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী। ঘটনা ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে লামিয়াকে। ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়।


ধর্ষণের এক মাস আট দিন পর, ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় লামিয়ার মরদেহ।


আরও পড়ুন: শহীদ কন্যা লামিয়ার পরিবারকে সহায়তা দিল দুই মন্ত্রণালয়


স্বজনরা জানান, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া লামিয়া আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়—সমাজের চাপ, লজ্জা আর বিচার না পাওয়ার ভয়ে। ন্যায়বিচার নিয়ে আজও সংশয়ে লামিয়ার মা রুমা বেগম। তার আশঙ্কা, বয়সের অজুহাতে আসামিরা শাস্তি থেকে পার পেতে পারে।


তাই লামিয়ার মায়ের দাবি, মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত বয়স নিরূপণ এবং সর্বোচ্চ শাস্তি—ফাঁসির দেয়া হোক আসামিদের।


পটুয়াখালী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন সিকদার জানান, গ্রেফতার তিন অভিযুক্তকে ২৫ মে হাজির করা হয় আদালতে। আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ২৮ মে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার বিচারকার্য শেষ করে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবীর।


আরও পড়ুন: শহীদ কন্যাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিচার দাবিতে পটুয়াখালী বিএনপির মানববন্ধন


গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি ফেরার পথে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার রাজগঞ্জ গ্রামে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে তিন কিশোর। পরদিন, ১৯ মার্চ, লামিয়া নিজেই বাদী হয়ে দুমকি থানায় মামলা করেন। এরপর ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেকের একটি বাসা থেকে লামিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।


উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক জসীম উদ্দিন। এরপর ২৯ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বাবার মৃত্যুর তিন মাস পার না হতেই মেয়ের জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়। শহীদ বাবার পাশে আজ নিথর শুয়ে আছেন তার প্রিয় কন্যা লামিয়া। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন