শহিদুল আলমদের জাহাজের ওপর ‘ইসরাইলি’ সামরিক বিমান

৪ দিন আগে
বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ একদল সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মী যে জাহাজে চড়ে গাজার দিকে যাচ্ছেন, সেটার ওপর একটি সামরিক বিমানকে চক্কর দিতে দেখা গেছে। বিমানটিকে ইসরাইলের বলে ধারণা করছেন ওই জাহাজে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা। এর মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পর সব জাহাজ ও এগুলোর স্বেচ্ছাসেবকদের আটকের পর ইসরাইলি অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখে নতুন করে রওনা হয়েছে আরও ১১টি জাহাজ। থাউজান্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নামে নৌবহরটির একটি জাহাজ হলো ‘কনসায়েন্স’। এই জাহাজটিতেই একদল সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীর সঙ্গে রয়েছেন শহিদুল ইসলামও।

 

ইসরাইলি হামলার আশঙ্কার মধ্যে গাজার উদ্দেশে দুঃসাহসিক এই যাত্রার লাইভ সম্প্রচার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতি মুহূর্তের আপডেট জানাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। রোববার (৫ অক্টোবর) বিকেলে শহিদুল ইসলামের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মিডল ইস্ট আইয়ের একটি ভিডিও প্রতিবেদন শেয়ার করা হয়। ভিডিওতে জাহাজের ওপর একটি সামরিক বিমান উড়তে দেখা যায়।

 

ভিডিওতে জাহাজের অন্যতম অধিকারকর্মী উইলিয়াম আলেকজান্ডার বলতে শোনা যায়, ‘একটা বড় সামরিক বিমান আমাদের চারপাশে কয়েকবার চক্কর দেয়ার পর এইমাত্র আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল। এটা নিঃসন্দেহে একটা অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড। তারা আমাদের ওপর একটি চক্কর দিয়েই সম্ভবত সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারত। এরপর তারা থাউজান্ড ম্যাডলিনস ফ্লিটের দিকে গেছে, সম্ভবত আরও কিছু তথ্য নেয়ার জন্য।’

 

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর ওপর আস্থা নেই, ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে ইসরাইলি বিক্ষোভকারীরা

 

তিনি আরও বলেন, 

আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে, এটা ইসরাইলের বিমান। আমাদের মাথার ওপর দিয়ে আর কে এভাবে সামরিক বিমান ওড়াতে পারে, তা আমার জানা নেই। আমার ধারণা, তারা আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালো।

 

এরপর ভিডিওতে সামরিক বিমানটির দিকে ইঙ্গিত করে জাহাজের আরেক স্বেচ্ছাসেবক বলতে শোনা যায়, 

তারা এখানে উত্তেজনা করতে চায়। সতর্ক থাকুন। ধীরে ধীরে এগোন। স্বাভাবিক থাকুন। তাদেরকে আমাদের সঙ্গে খেলতে দেবেন না।

 

এরপর উইলিয়াম জাহাজের ভেতরের ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম দেখিয়ে বলেন, ‘আমার পেছনে প্রচুর ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম রয়েছে। এগুলো আমরা কনসায়েন্স জাহাজে করে গাজায় নিয়ে যাচ্ছি।’ এরপর দিয়া দাউদ নামে জরুরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা এই কনসায়েন্স ফ্লোটিলায় গাজার উদ্দেশে রওনা হয়েছি সচেতনতা তৈরির জন্য। আমরা গাজা উপত্যকার চিকিৎসকদের জন্য চিকিৎসা সামগ্রি নিয়ে যাচ্ছি।’

 

জাহাজের ক্যাপ্টেন ম্যাডেলেইন হাবিব বলেন, ‘আমি সত্যিই আশা করছি, এবার আমরা গাজায় পৌঁছাব। সত্যিকারে একটি শান্তিপ্রক্রিয়ার আশা করছি এবং আমাদের আটকানো হবে না। আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্থায়ী করিডর চাই, যাতে তারা সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করতে পারে। আমরা শুধু ত্রাণ নিয়ে আসার জন্য মানবিক করিডরের কথা বলছি না। বলছি এমন একটি করিডরের কথা, যাতে ফিলিস্তিনিরা সমুদ্রে বাণিজ্য করতে পারে, যা তাদের মৌলিক অধিকার।’

 

আরও পড়ুন: নীরবতা ভাঙলেন ইসরাইলের হামলায় বেঁচে যাওয়া খলিল আল-হায়া, কী বললেন?

 

ভিডিওতে ওই জাহাজে থাকা মার্কিন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা টম হায়েস বলেন, ‘একজন আমেরিকান হিসেবে আমাদের এখন কী করা উচিত? আমার এখন কী করা উচিত? সব আমেরিকানের কী করা উচিত? বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কী করা উচিত? আমাদের অবশ্যই প্রতিটি ফোরামে, সম্ভাব্য প্রতিটি উপায়ে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে, যাতে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের পথ সুগম হয়।’

 

এর আগে শহিদুল আলম এক বার্তায় জানান, রোববার তাদের গাজায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু জাহাজ ধীর গতিতে চলার কারণে তাদের আরও দেরি হবে। এক ফেসবুক পোস্টে শহিদুল আলম বলেন, ‘শান্ত সমুদ্র আর দারুণ রোদ। গত রাতটা খোলা ডেকে ঘুমিয়েছি আমি। আজ আমাদের গাজায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু ছোট নৌকাগুলোর কাছাকাছি থাকতে গতি কমিয়ে দেয়ায় এখন আরও দেরি হবে।’

 

গত মাসের শুরুর দিকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামে একটি নৌবহর গাজার উদ্দেশে রওনা হয়। তবে ইসরাইলি নৌবাহিনী এই বহরের ৪৪টি জাহাজের পাশাপাশি সেগুলোতে থাকা ৫০০ জনেরও বেশি কর্মীকে গ্রেফতার করে। ইসরাইল এর আগেও গাজামুখী জাহাজে হামলা চালিয়ে যাত্রীদের বহিষ্কার ও পণ্য জব্দ করেছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন