শরীরে কীসের অভাব, আগে থেকেই জানিয়ে দেয় নখ

৮ ঘন্টা আগে
আমরা নখে রঙ করি, সাজাই। কিন্তু নখ শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, শরীরের নানা পুষ্টিহীনতার ইঙ্গিতও আগে থেকে জানিয়ে দেয়। শরীরে আয়রন, জিঙ্ক, বি-ভিটামিনসহ দরকারি পুষ্টির ঘাটতি হলে তার প্রথম লক্ষণ অনেক সময় নখেই দেখা যায়। তাই নখের পরিবর্তন নজরে রাখলে অনেক রোগ শুরু হওয়ার আগেই সতর্ক হওয়া যায়।

চিকিৎসকরাও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষায় নখ দেখেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য বুঝে নেন। স্বাভাবিক নখ সাধারণত মসৃণ, মজবুত এবং হালকা গোলাপি রঙের হয়। কিন্তু খাবারে ঘাটতি, রক্তস্বল্পতা, পরিপাকজনিত সমস্যা কিংবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ—এসব কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে নখ দ্রুত তার রূপ বদলায়।

চলুন জেনে নেয়া যাক নখ কীভাবে জানায় কোন পুষ্টির অভাব হচ্ছে—

 

চামচের মতো বাঁকানো নখ—আয়রনের অভাব

নখ চামচের মতো ভেতরের দিকে বাঁকতে শুরু করলে তাকে কোয়িলোনাইকিয়া বলা হয়। এটা সাধারণত আয়রনের কমতির কারণে হয়, যা থেকে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। আয়রন কমে গেলে নখ পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।

 

এই সমস্যা বেশি দেখা যায় যাদের মাসিক রক্তক্ষরণ অনেক বেশি, যারা নিরামিষভোজী, বা যাদের খাবার ঠিকভাবে শরীর শোষণ করতে পারে না। সময়মতো আয়রন না নিলে ক্লান্তিভাব, শ্বাসকষ্ট, এমনকি হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। তাই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার—যেমন পালং শাক, মাংস, ডাল—সঙ্গে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। রক্তে ফেরিটিন কম হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে কয়েক মাসেই নখ আগের মতো হয়ে যায়।

 

আরও পড়ুন: ত্বকের যত্নে বাড়াবাড়ি? জেনে নিন ৩ মারাত্মক ভুল

 

নখে সাদা ছোট দাগ—জিঙ্কের ঘাটতি

নখে হঠাৎ সাদা দাগ দেখা দিলে সেটা জিঙ্ক কমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখে, আর নখের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

রোগের পর দুর্বল হলে, খাবারে যথেষ্ট প্রাণিজ প্রোটিন না থাকলে, বা ক্রোন্স ডিজিজের মতো পেটের অসুখ থাকলে জিঙ্ক কমে যায়। ছোটবেলায় পেটের সমস্যা থাকলে সাদা দাগ আরও বেশি দেখা যায়।

এই দাগগুলো থাকলে খাবারে ঝিনুক, কুমড়োর বিচি, ছোলা, গরুর মাংসের মতো জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার বাড়িয়ে দিতে হবে। রক্ত পরীক্ষা করে জিঙ্কের মাত্রা জানা যায়, আর খুব কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নেয়া হয়। জিঙ্ক মারাত্মকভাবে কমে গেলে নখে গভীর দাগ বা খাঁজও দেখা দিতে পারে, যা ঠিক হতে সঠিক খাবার খুব জরুরি।

 

নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া—বিভিন্ন পুষ্টির অভাব

নখ যদি একটু চাপেই ভেঙে যায় বা খসখসে হয়ে যায়, সেটা হতে পারে বায়োটিন, আয়রন আর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থেকে। বায়োটিন নখকে শক্ত করে রাখে, আর আয়রন কমে গেলে নখ নরম হয়ে যায়।

নখ ভঙ্গুর হওয়ার সঙ্গে চুল পড়া, শরীর দুর্বল লাগা, পেশি ব্যথার মতো উপসর্গও থাকে অনেকের।

যা করতে হবে—প্রতিদিন ডিম, বাদাম, মাছ, শাকসবজি, দুগ্ধজাত খাবার আর ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল খেলে নখ ধীরে ধীরে শক্ত হয়।

 

নখ নীলচে বা খুব গাঢ় হয়ে যাওয়া—ভিটামিন বি১২-এর অভাব

নখের রঙ যদি নীলচে, গাঢ় বাদামি বা কালচে হয়ে যায়, সেটা ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি হতে পারে। বি-১২ রক্ত তৈরি করে, আর নখে অক্সিজেন পৌঁছানোর কাজেও দরকার হয়।

ভেগান–নিরামিষভোজী, বয়স্ক মানুষ, কিংবা যাদের শরীর বি১২ ঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না—তাদের ঝুঁকি বেশি। বি-১২ কমে গেলে হাত-পায়ে ঝিনঝিনি ভাব, অবসাদ, মনোযোগ কমে যাওয়া–এমন অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মাংস, ডিম, দুধ, বা বি-১২ সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ দুধ নিয়মিত খেতে হবে। খুব কমে গেলে ডাক্তার ইনজেকশন বা বড় মাত্রার ওষুধ দিয়ে থাকেন। চিকিৎসা ঠিকমতো নিলে নখের রঙ-আকৃতি আগের মতো হয়ে যায়।

 

আরও পড়ুন: বৃষ্টির দিনে পায়ের যত্নে কী করবেন?

 

নখে আড়াআড়ি গভীর দাগ—অসুস্থতা বা জিঙ্ক কমে যাওয়ার সংকেত

নখে মোটা হরাইজন্টাল দাগ দেখা দিলে সেটা বো’স লাইনস। এটা হয় শরীরে জিঙ্ক খুব কমে গেলে, বা বড় কোনো অসুখে নখের বৃদ্ধি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে।

 

নখের স্বাভাবিক বৃদ্ধি মাসে প্রায় ৩ মি.মি., তাই দাগ পুরোপুরি উঠতে ছয় মাস লাগে। বাদাম, বীচি, ডাল, মুরগির মাংসের মতো খাবার খেলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। তবে আয়রন বা বি-ভিটামিন কমলেও একই রকম দাগ দেখা দিতে পারে, তাই প্রয়োজনে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।

 

নখ শরীরের সহজ ভাষায় বলে দেয়া এক ধরনের স্বাস্থ্যবার্তা। তাই নখে পরিবর্তন দেখলে ভুলে যাওয়ার মতো নয়। নিয়মিত ও পুষ্টিকর খাবার, সঠিক চিকিৎসা আর অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তনেই নখ আবার সুস্থ ও শক্ত হয়ে ওঠে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন