রামগতিতে পাউবোর জমি বেদখল, বসতি গড়েছে ২৭ পরিবার!

২ সপ্তাহ আগে
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক সময়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য নির্ধারিত পাঁচ একর ভূমি দেড়যুগ ধরে অবৈধ দখলদারের কবলে রয়েছে।

চারদিকে বাউন্ডারি ওয়ালবেষ্টিত এ সংরক্ষিত এলাকার ভূমি দখল করে এক শ্রেণির প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আধাপাকা ও টিনশেড ভবন তৈরি করে সেখানে এখন বসবাস করছেন অন্তত ২৭টি পরিবার। এতে পাউবোর অন্তত তিন একর ভূমি বেদখল হয়ে গেছে।


অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক এক কর্মকর্তা বাহার মিয়া ও তার ছেলে চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন, ভূমিহীনখ্যাত প্রয়াত রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ উদ্দিন চৌধুরীসহ একই দলের প্রভাবশালী একটি চক্র, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে রামগতিসহ বিভিন্ন এলাকার নদীভাঙনের শিকার অন্তত ৫৬টি পরিবারকে পাউবোর ওই ভূমিতে জোরপূর্বক গৃহনির্মাণ করে বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দেন। এখনও ওই ভূমিতে প্রায় ১৫ বছর ধরে অবস্থান করছেন ২৭টি পরিবার। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে সরকারি স্বাভাবিক কার্যক্রম।


পাউবো সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পর রামগতি বাজার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন নির্মানের জন্য ৫ একর ভূমি সংরক্ষণ করে পাউবো কর্তৃপক্ষ। বাউন্ডারি ওয়াল বেষ্টিত সংরক্ষিত ওই ভূমিতে একতলা বিশিষ্ট ৬টি স্থাপনা নির্মাণ করে একটিতে দীর্ঘ সময় উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরে ওই কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী হলে জুনিয়র কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা ভবনটি.ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করছেন ।


পাউবো কর্তৃপক্ষ সময় সংবাদকে জানান, বাউন্ডারিওয়াল বেষ্টিত ও সংরক্ষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও দেড়যুগ আগে তাদের কার্যালয়ে ভিতরে জোরপূর্বক ঢুকে বসতিস্থাপন শুরু করে ৫৬ টি পরিবার। এসময় বাধা দিলে ওই পরিবারগুলোকে অসহায় নদীভাঙা দাবি করে তাদের পক্ষে অবস্থান নেয় পতিত সরকারের প্রভাবশালী ওই চক্রটি। তারা দখলদারদের সরাসরি নেতৃত্ব দেন। এরপরও বাধা দিতে গিয়ে ওই পরিবারগুলোর অন্তত কয়েক’শ নারী-পুরুষের উশৃঙ্খল আচরণ ও পরিস্থিতির কাছে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েন কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে অর্ধেক পরিবার দখল ছেড়ে দিলেও  ২৭টি পরিবার অদ্যবধি দখল ছাড়েনি।

আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ, মামলা তুলে নিতে হুমকি

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মানাধীণ একতলা ৫টি ভবন পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অন্য আরেকটি জরাজীর্ণ ভবনে পাঁচজন কার্য-সহকারী নিয়মতি থাকছেন। পাশেই একটি পুকুরের তিন পাশ দখল করে অন্তত ২৭টি পরিবার আধাপাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দীর্ঘ বছর ধরে বসবাস করছেন। গৃহপালিত হাস মুরগিসহ গরু ছাগলও লালন-পালন করে সংরক্ষিত এলাকাটিকে গরু ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত করে পেলেছেন। পাশাপাশি, পাউবোর সংরক্ষিত বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে নিজেদের চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরী করে রেখেছেন। এদিকে, পাউবোর লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ বাউন্ডারী ওয়াল ইটের গাঁথুনী দিয়ে পুনরায় নির্মাণ করতে গেলে দখলদার পরিবারের সদস্যরা এসে উশৃংখল আচরণ করে নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রামগতি উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী এ এমএম নঈম বলেন, বাউন্ডারীওয়ালে সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও পাউবোর জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে বসতি গড়ে তুলেছেন দখলদার পরিবারগুলো। গেল সরকারের আমলে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পরিবারগুলোকে এখানে বসতি উঠাতে সহযোগিতা করেন। এতে পাউবোর পাঁচ একর জমির মধ্যে প্রায় তিন একর জমি দখল হয়ে গেছে। একাধিকবার নোটিশ করেও তাদেরকে উচ্ছেদ করা যায়নি। নোটিশ পৌঁছাতে গিয়ে তাদের আক্রমণের শিকার হতে হয় আমাদের। এখন তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারাই যেন এ ভূমির মালিক। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এখন তাদের কাছে অসহায়।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামগতি বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান,  সাবেক রামগতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আজাদ উদ্দিন চৌধুরীসহ কয়েকজন প্রভাবশালী প্রায় দেড়যুগ আগে পাউবোর জমিতে অন্তত ৫৪টি পরিবারকে অবৈধভাবে ঘর উত্তোলন করতে সহায়তা করেন। বিনিময়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। এরপর গেল সরকারের মাঝামাঝি সময়ে এসে স্থানীয় ও পাউবোর সাবেক এক কর্মকর্তা বাহার মিয়া ও তার ছেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন বসিয়েছে আরও কয়েকটি পরিবার। তারাও হাতিয়ে নিয়েছেন নগদ অর্থ। যদিও কেউ মুখ খুলে টাকার কথা স্বীকার করছেন না। তবে সবকটি পরিবার ওইসব নেতাদের চাহিদামত  টাকা দিয়েই এখানে ঘর তুলে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন।


নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় অন্তত ছয়জন বাসিন্দা জানান, দখলদারদের মধ্যে বড়খেরী ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি আলাউদ্দিন ও তার ছেলে হৃদয় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত  পাউবোর সংরক্ষিত এলাকার ভেতরে বসতিস্থাপন করে মুলত নিরাপদ মাদক ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তারা। দখলবাজ ২৭ পরিবারের পক্ষে খবরদারী ও নিজেদের অসহায় দাবি করে ওই জমিতে নির্বিঘ্নে বসবাস করছে তারা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতি গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদকের ব্যবসা। পাউবোর লোকজন মুলত তাদের দুই বাপ ছেলের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।


পাউবোর জমি দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে  শ্রমিক দল নেতা আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের থাকার জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে বসবাস করছি। মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগটি সত্য নয় বলে দাবি তার।’

আরও পড়ুন: নরসিংদীতে রেলওয়ের জমিতে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে পাউবো কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সহযোগিতা চাইলে উপজেলা প্রশাসন তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করবে।’


লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ-জামান খান বলেন, ‘পাউবোর জমি দখলে নেয়া পরিবারগুলোকে জমি ছাড়তে ইতোমধ্যেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন