রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিভাগের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস ধরে রাখেন, আমাদের নিয়তের মধ্যে কোনো গলদ নেই। আমরা অতি স্বচ্ছ একটি নির্বাচন চাই। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করতে চাই না। বরং আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই, পার্টনার হিসেবে পাশে পেতে চাই। সিইসি হিসেবে যেমন আমার দায়িত্ব আছে, আপনাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, এখানেও আপনাদেরও অবদান রাখতে হবে। আমি যেমন সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, তেমনি নাগরিক হিসেবেও আমাদের সবার একটি দায়িত্ব আছে। আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি এবং পাশে পেতে চাই।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই এবং ভোটারদের জন্য এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে প্রতিটি বাংলাদেশি ভোট দিতে পারে। প্রবাসে যারা আছেন, তাদের জন্যও আমরা ভোটের ব্যালটের ব্যবস্থা করেছি। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজেই ভোট দিতে পারেন না— এটা কেমন কথা! তিনি ভোট সংগ্রহ করবেন, কিন্তু দিতে পারবেন না, এটা তো যুক্তিসঙ্গত নয়। এবার আমরা ভোট দেয়ার সেই সুযোগের ব্যবস্থা করছি।’
এনসিপির দলীয় প্রতীক প্রসঙ্গে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘শাপলা প্রতীক যেহেতু আমাদের নির্ধারিত তালিকায় নেই, তাই দিতে পারিনি। দেখেন, ২০২৪-এর আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যারা ছিল তারাই কিন্তু এনসিপির নেতৃত্বে রয়েছেন। তারা গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করবেন এটা আমি মনে করি না। কোনো অংশে তাদেরকে আমরা কম দেশপ্রেমিক ভাবতে চাই না। তাইলে তারা এরকম জীবন দেয়ার জন্য রাস্তায় নামতেন না, তাই না? এনসিপিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৪-এর অভ্যুত্থানে যোগদান করেছিল। সুতরাং তারাও দেশের মঙ্গল চান, গণতন্ত্র চান, ভালো চান। আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্র উত্তরণের পথটা যাতে সুন্দর হয়, সেরকম একটা পরিবেশের তারা সম্মতি দিবে।’
আরও পড়ুন: ভোটগ্রহণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক নিয়োগ: সিইসি
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টিকে দেশপ্রেমিক হিসেবে জানি, তারা গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করবে বলে মনে করি না। এনসিপির দলীয় প্রতীক প্রশ্নে আমি তাদেরকে দেশের মঙ্গল কামনাকারী হিসেবে জানি, দেশপ্রেমিক হিসেবে জানি। তারা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানে, এনসিপি নিজেদেরকে গণতন্ত্রের পথে বাধা হিসেবে আনবে না বলে আমি মনে করি।’
সত্য-মিথ্যা যাচাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন আপনারা আমাদের সম্পর্কে প্রচার বা অপপ্রচার যা শুনবেন, দয়া করে আগে ফ্যাক্ট চেক করে নেবেন। আমরা এজন্য একটি ফ্যাক্ট চেক সেল গঠন করছি। যাতে তথ্য পেলে আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয়। সত্য হলে প্রচার করবেন।’
চট্টগ্রামের ভোটের পরিবেশ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের ভোটের ইতিহাস বদলাতে চাই। আগের মতো যেন না হয়, সেই নিশ্চয়তা আমি এখানে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছি। ইনশাল্লাহ আগের মতো হবে না। আমি সাংবাদিকদের পূর্ণ সহযোগিতা চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই, যাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সুন্দরভাবে নিজের ভোট দিতে পারে নিরাপদ পরিবেশে। যাতে নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘এআই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, এটি বিশ্বের একটি সমস্যা। এআই-এর ৫০ শতাংশ সোর্স শনাক্ত করা যায় না। আলোচনায় কেউ কেউ বলেছে ইন্টারনেট বন্ধ করতে। আমরা ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নই। আমি চাই, তথ্য প্রবাহ বজায় থাকুক। আমরা চাই একটি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে। লুকানো কোনো নির্বাচন দিতে চাই না, রাতের অন্ধকারের ভোট চাই না। আমরা চাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সবার দৃষ্টিগোচর হয় এমন নির্বাচন।’