রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই গ্রামে অভিযান চালালে আসামিপক্ষের লোকজন পুলিশকে ‘ডাকাত’ বলে চিৎকার শুরু করে। এতে প্রতিবেশীরাও ডাকাত মনে করে চিৎকারে যোগ দেন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পুরো গ্রামে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার না করেই সেখান থেকে ফিরে যায়।
মামলার বাদী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সম্প্রতি তার বাড়িতে হামলা চালায় আসামি সুমন মিয়া (৪২), কামাল মিয়া (৩৫) ও মাসুদ মিয়া (৪০) নেতৃত্বাধীন একটি দল। এসময় লুটপাট ও গাছপালা কাটার ঘটনাও ঘটে। এ বিষয়ে তিনি ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হওয়ার পর রাতেই পুলিশ আসামিদের ধরতে অভিযানে যায়।
মোয়াজ্জেমের দাবি, পুলিশ চলে যাওয়ার পর আসামিপক্ষ তার বাড়িতে হামলা চালায়। ভাঙচুর চালিয়ে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। এমনকি নিজেদের একটি ঘরও এলোমেলো করে তারা প্রচার চালায় যে, তাদের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আসামিরা বাড়িতে অবস্থান করছে এমন খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার একটি দল সেখানে যায়। দরজা খুলতে বললে পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করেন। এরপর আশপাশের প্রতিবেশীরাও ছুটে এসে ডাকাত ডাকাত বলে হৈচৈ করতে থাকেন। বিশৃঙ্খলার মুখে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয় এবং আসামিদের ধরতে না পেরে সরে আসে।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হোটেলে ভয়াবহ আগুন
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা মামলার আসামি ধরতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে হঠাৎ ডাকাত বলে চিৎকার শুরু হয়। এতে এলাকার লোকজন জড়ো হয় এবং আমাদের সঙ্গে থাকা অন্য মামলার আসামিদের ছিনিয়ে নেয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই আমরা কৌশলগত কারণে সেখান থেকে ফিরে আসি। পরে বাদীর বাড়িতে হামলা চালানো হয় এবং আসামিপক্ষ নিজেদের বাড়িতে ভাঙচুর করে ডাকাতির নাটক সাজায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।’
অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি সুমন মিয়া বলেন, ‘আমরা কারও বাড়িতে হামলা চালাইনি, নিজেদের জমি দখলে নিয়েছি। জমির কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। যার সঙ্গে বিরোধ, তিনি বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের আত্মীয়। গতকাল রাতে পুলিশের পোশাক পরা ৩-৪ জনের সঙ্গে আরও ১০-১২ জন আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। তারা ঘরে ঢুকে ড্রয়ার-আলমারি ভাঙচুর করে টাকা ও নারীদের গলার সোনার চেইন নিয়ে যায়। তখন মহিলারা ডাকাত বলে চিৎকার করেন। আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে তারা পালিয়ে যায়।’
উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হাসান খান বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিবেশীদের জমি নিয়ে বিরোধ আদালতে মীমাংসা হলেও আসামিপক্ষ জোর করে ঝামেলা করছে। পুলিশ আসামি ধরতে গেলে ডাকাত বলে চিৎকার করে গ্রামবাসীকে জড়ো করা হয়। পরে আসামিরা ভাঙচুরও করেছে। এ ঘটনায় গ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে বিকেলে বৈঠক ডেকেছি।’
]]>