রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, সেবা ব্যাহত

১ সপ্তাহে আগে
মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে লোকবল সংকট সৃষ্টি হয়ে এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পুরোপুরি ব্যাহত হয়ে পড়েছে। আড়াই লাখ মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এই হাসপাতালটি বর্তমানে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, এক্সরে মেশিন, অ্যাম্বুলেন্স এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ নানা জরুরি পদ শূন্য থাকায় এখানকার রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না।

রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ১০ জন চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। পাশাপাশি, হাসপাতালের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে, যার মধ্যে জুনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিসিন ও সার্জারি বিশেষজ্ঞের পদ রয়েছে। এছাড়া, অ্যানেসথেসিয়ালিস্টের অভাবও দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায়, অনেক ক্ষেত্রে প্রেষণে আসা চিকিৎসকরা সেবা প্রদান করছেন।


এছাড়া, এক্সরে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এর ফলে হাসপাতালটিতে এক্সরে কিংবা প্যাথলজি পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না, এবং রোগীরা বাধ্য হয়ে বাইরের ক্লিনিকে গিয়ে অতিরিক্ত খরচে পরীক্ষা করাচ্ছেন। সায়েফ নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তার রোগীকে এক্সরে করাতে বলা হলেও হাসপাতালের এক্সরে মেশিন নষ্ট থাকায়, তারা বাইরের ক্লিনিক থেকে এক্সরে করাতে বাধ্য হন। এতে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগের অন্ত নেই।


রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটিই চালু থাকলেও অপর দুটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে, জরুরি সেবা প্রদানেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাও অব্যবস্থাপনায় পড়েছে। হাসপাতালটিতে ৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে একমাত্র পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে ৩১ শয্যার হাসপাতালটি পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না।


সরেজমিনে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কথা হয় সায়েফ নামের এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে। তিনি জানান, তার রোগীকে এক্সরে করাতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ হাসপাতালে এক্সরে মেশিন নষ্ট। কাজেই বাধ্য হয়েই বাইরের ক্লিনিক থেকে অধিক টাকা ব্যয়ে এক্সরে করান।


একইভাবে আরও অনেক রোগী ও তার আত্মীয় স্বজনরা নানা অভিযোগ তুলে ধরেন এ প্রতিবেদকের কাছে।


আরও পড়ুন: জনবল সংকটে নিজেই ‘অসুস্থ’ পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স


রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স শেলী জানান, এ হাসপাতালটিতে প্রচুর রোগীর ভিড় থাকে। তবে ডাক্তার সংকটে চিকিৎসা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এতে নার্সদের উপরই বেশি চাপ পড়ছে। তিনি বলেন, নার্স সংকট থাকার পরও এরইমধ্যে ৫ জন নার্স অন্যত্র বদলি হয়েছেন।


রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা আরএমও ডা. উৎপল দাশ জানান, নানা সমস্যার পরও রোগীদের ভালো চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।


তিনি বলেন, এ হাসপাতালের বহির্বিভাগের প্রতিদিন কম করে হলেও সাড়ে ৪০০ রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। এ হাসপাতালটি সুষ্ঠুভাবে চালাতে হলে অন্তত আর ১৪ জনও চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতাকর্মীও অভাবে হাসপাতালটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না। ১৯৮৫ সালে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হয়।


জেলা ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. বর্নালী দাশ জানান, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছে, এবং আশা করছেন শীঘ্রই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন