রাজধানীতে দোকান মালিকের ছেলেকে অপহরণের পর হত্যা, নেপথ্যে কী?

৬ ঘন্টা আগে
রাজধানীতে আতিক হাসান (১৩) নামে এক কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে দোকানের কর্মচারী তারেকের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, দোকান মালিকের ছেলেকে মুক্তিপণের পাঁচ কোটি টাকা হাতানোর উদ্দেশে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। খুনের অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় অভিযুক্ত কর্মচারী ধরা পড়ে র‌্যাবের জালে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৪ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে আজিজ সুপার মার্কেটের মুসলিম বিরিয়ানিতে তেহারী খেতে যায় মালিকের ছেলে আতিক হাসান। কথা ছিল খাওয়া শেষে বাসায় ফিরবে। কিন্তু, সেই থেকে নিখোঁজ হয় সে।

 

একমাত্র ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা বাবা বাবুল হোসেন। পুরো এলাকা তন্নতন্ন করে ঘুরে ঘেঁটে দেখেছেন সিসিটিভি ফুটেজ। তারপরও খোঁজ মেলেনি আতিকের। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে দ্বারস্থ হন র‌্যাবের। দেন লিখিত অভিযোগ।

 

এর মাঝে ঘটনা নতুন মোড় নেয়। র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগের আগেই ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস আসে বিভিন্ন ফোন থেকে। ভিন্ন ভিন্ন নম্বর থেকে চাওয়া হয় এই মুক্তিপণ। পরে সেসব জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায়, ফোন নম্বরগুলো ছিল একাধিক রিকশাচালকের। কয়েকজন রিকশাচালককে আটকের পরও খোঁজ মেলেনি আতিকের।

 

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদল নেতা হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাসহ ২

 

র‌্যাব জানায়, ৫ কোটি থেকে মুক্তিপণের টাকা নামে ৫ লাখে। পরে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আসামি ধরতে ফাঁদ পাতে র‌্যাব। উত্তরা, পল্লবীসহ একাধিক জায়গায় অভিযানের পর কারওয়ানবাজরে সন্ধান মেলে অপহরণকারীর। বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল। দেখা যায় অপহরণকারী নিখোঁজ আতিকের বাবার দোকানের কর্মচারী তারেক। সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। কারণ নিজেদের গ্রামের ছেলে তারেককে চাঁদপুর থেকে এনে আতিকের বাবাই কাজ দেন নিজের দোকানে।

 

তারেক দাবি করেছে, দোকানে কাজের পর বাসায়ও কাজ করানো হত তাকে। তার দাবি, পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক পেত না সে। এই ক্ষোভ ও অনেক টাকা উপার্জনের লোভে মালিকের ছেলেকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তারেক। এ জন্য কয়েকবার র‌্যাকিও করে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকা। পরিকল্পনা মতো ১৪ নভেম্বর আতিককে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে নেয়া হয় দিয়াবাড়িতে। সেখানে গিয়ে ঘটে আরেক নাটকীয়তা। তারেক ও আতিক পড়ে ছিনতাইকারীর কবলে। স্বর্বস্ব লুটের পরও আতিককে নিয়ে বাসায় ফিরতে চায় না তারেক। এতে তারেককে সন্দেহ করে আতিক। পরে আতিককে গলায় শার্ট পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে সে। মৃত্যু নিশ্চিত করে খালের ধারে মরদেহ ফেলে ফিরে আসে।

 

এখানেই শেষ নয়, হত্যার পর এবার নতুন নাটক শুরু করে তারেক। আতিকের পরিবারের সঙ্গে আতিককে খোঁজা শুরু করে তারেক। একই সঙ্গে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টাও চালাতে থাকে সে। বিভিন্ন রিকশায় করে রাজধানীতে ঘুরে ঘুরে রিকশাচালকের ফোন থেকে ভিন্ন কণ্ঠে আতিকের বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ চায় তারেক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। ধরা পড়ে র‌্যাবের জালে।

 

আরও পড়ুন: ধারের টাকা ফেরত নিতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী, যুবক গ্রেফতার

 

র‌্যাব ৩- এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, 

ক্রাইম করে বাঁচার উপায় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অথবা মিডিয়াতে ক্রাইম সিনে যে কার্যকলাপ দেখি, সেগুলো অনুসরণ করেছিল তারেক। সে পুরো পরিকল্পিতভাবেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

 

তিনি বলেন, বিভিন্ন রিকশায় উঠে রিকশাওয়ালাদের মোবাইল ব্যবহার করে ভুক্তভোগীর বাবাকে ফোন করে মুক্তপণ চাইত অভিযুক্ত তারেক। এই মুক্তিপণ দাবি করে করে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করা হত যে, ভুক্তভোগী এখনও বেঁচে আছে। ভুক্তভোগীর বাবার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা কোনোভাবে নিতে পারত, তাহলে হয়ত সে ওই এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় নিত।

 

তিনি আরও জানান, তারেক ছাড়াও দুই ছিনতাইকারীকেও গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। কিন্তু এখন পর্যন্ত হত্যার সঙ্গে ছিনতাইকারীদের সম্পৃকক্ততা পায়নি র‌্যাব। তারেককে একাই অপহরণ ও হত্যা করেছে বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তারেক।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন