রাঙ্গামাটিতে কমছে কমলা বাগান, কারণ কী?

৫ ঘন্টা আগে
রাঙ্গামাটির ভূপ্রকৃতি ও অনুকূল পরিবেশের কারণে একসময় কমলা বাগান গড়ে তোলার ধুম পড়েছিল। এটি কৃষিক্ষেত্রে জাগিয়েছিল নতুন সম্ভাবনা। কিন্তু ফল ঝরে পড়া, আকার ছোট হওয়া এবং গাছ রোগে আক্রান্তসহ নানা কারণে এখন আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, পরামর্শ না মেনে ফল সংগ্রহ (হারভেস্ট) ও পরিচর্যায় অবহেলার কারণেই কমছে কমলা চাষ।

রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের বগাছড়ি এলাকার সুদত্ত চাকমা। স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় ২০২০ সালে চার একর জমিতে রোপণ করেন ৮০০ কমলার চারা। রোপণের চতুর্থ বছরে ভালো ফলন পেলেও পঞ্চম বছরে প্রত্যাশা অনুসারে ফলন পাননি। যা হয়েছে তাও আকার ছোট, কমেছে মিষ্টতা আর গাছে দেখা দিয়েছে রোগবালাই। শুধু সুদত্ত চাকমার বাগানেই নয়, জেলার অধিকাংশ কমলা বাগানের একই চিত্র।

 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ফলন কম হওয়া ও রোগবালাইয়ের কারণে গত দুই বছর ধরে নতুন কোনো বাগান সৃজন হয়নি। ফলে ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে কমলা বাগান। অথচ পাহাড়ের পতিত জমিতে গড়ে ওঠা এসব বাগানের কমলা রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় স্থানীয় বাজারসহ সারা দেশে বেশ চাহিদা ছিল। তবে সম্প্রতি ফলন কম ও রোগবালাইয়ের কারণে শঙ্কিত চাষিরা।

 

বাগান মালিক সুদত্ত চাকমা বলেন, ‘গেল বছর ভালো ফলন পেলেও কী কারণে এ বছর এমন হলো ঠিক বুঝতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিভাগের সাথে আলোচনা করতে হবে। অনেক কষ্টে এই বাগান করেছি, এক বছর পর এমন হওয়াতে শঙ্কায় আছি। আগামী বছর না জানি কী হয়?’

 

আরও পড়ুন: পাহাড় কাটায় রাবিপ্রবি প্রকল্প পরিচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

 

সবুজ মিয়া নামের আরেক চাষি বলেন, ‘আমার বাগানে প্রায় ৪০০ কমলা গাছ রয়েছে। এবার তেমন ফলন হয়নি। যা হয়েছে সেগুলোও ঝরে যাচ্ছে। কিছু কিছু গাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে। এসবের কোনো প্রতিকার কোথাও পাচ্ছি না।’

 

ব্যবসায়ী সুমন্ত চাকমা বলেন, ‘৯ লাখ টাকা দিয়ে একটা কমলা বাগান কিনেছিলাম। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পেরেছি। গাছে যে কমলা আছে সেগুলো দিয়ে আদৌ বাকি চার লাখ টাকা তোলা যাবে কি না, সেটা নিয়ে শঙ্কা আছে। নিজের পরিশ্রম ও সারের খরচের হিসাব বাদই দিলাম। সব কিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’

 

নানিয়ারচরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিনু বেগম বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ না মেনে খেয়াল-খুশিমতো ফল সংগ্রহ করার কারণে এমনটা হয়েছে। গত বছর অধিক সময় ধরে ফল গাছে রেখে দেয়ার কারণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এবার সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করা হলেও সময়ের অভাবে তা সঠিকভাবে কাজ করেনি, তাই ফলন বিপর্যয় হয়েছে। বাগান মালিকদের আরও সচেতন হতে হবে।’

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘রাঙ্গামাটির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে কমলা স্থান করে নিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় কৃষকদের গাছের সঠিক পরিচর্যা ও জ্ঞানের অভাবেই এমন বিপর্যয় ঘটেছে। তবে সব থেকে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, গেল চার বছরে রাঙ্গামাটিতে নতুন করে কোনো কমলা বাগান গড়ে ওঠেনি, বরং প্রায় ২০০ হেক্টরের মতো বাগান কমে গেছে। তবে আমরা কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি।’

 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত দুই বছরে জেলায় কমলা বাগান হ্রাস পেয়েছে ১৫০ হেক্টর। বর্তমানে ৪০০ হেক্টর জমিতে কমলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার মেট্রিক টন কম।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন