খুলনার দৌলতপুরসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার পাট গোডাউনে পড়ে রয়েছে রফতানিযোগ্য বিপুল পরিমাণ কাঁচা পাট। দেশে চাহিদা কম এবং দাম পড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারেও তা বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, খুলনা অঞ্চল থেকে প্রতিবছর গড়ে সোয়া লাখ মেট্রিক টন কাঁচা পাট রফতানি হয়, যার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই যায় ভারতে। কিন্তু গত ২৭ জুন ভারত সরকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা পাটসহ ৯টি পণ্যে রফতানি নিষিদ্ধ করে। এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে পাটখাত প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: কাঁচাপাট রফতানিকারকদের ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
গাজী জুট ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী গাজী শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আগেই অর্ডার নেয়া হয়েছে, মালও প্রস্তুত। কিন্তু এখন সেটা পাঠাতে পারছি না। এতে শুধু ব্যবসায়ী নয়, শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
এই অঞ্চলের প্রায় ২০টি রফতানিমুখী পাটপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক। বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের অনেকেই। দৌলতপুরের শ্রমিক শাহজাহান আলী জানান, ‘১০ বছর ধরে পাট কারখানায় কাজ করছি। এখন বসে আছি। মাল রফতানি না হলে তো মালিক বেতনও দিতে পারবে না।’
একইভাবে হতাশা প্রকাশ করেন শ্রমিক বাবুল হোসেনও। তিনি বলেন, ‘আমরা দিনমজুর মানুষ। দিনে কাজ, দিনে খাবার। এখন তো কিচ্ছু নাই। সরকার যদি কিছু না করে, আমরা পথে বসবো।’
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশেই পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার বাড়ানো গেলে কাঁচা পাটের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে এবং ভবিষ্যতে রফতানি নির্ভরতা কমবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক খান মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের উচিত, দেশে পাট পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। যেমন ১৯ ধরনের মোড়কে পাট ব্যবহার নিশ্চিত করলে কাঁচা পাটের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দ্বিগুণ বাড়বে।’
আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে পাটের ভালো ফলন, দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক
এদিকে কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি বিকল্প বাজার খোঁজার কাজ শুরু করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। ইপিবির খুলনা পরিচালক জিনাত আরা আহমেদ জানান, ‘আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং সাফটার সম্ভাব্য বাজারগুলো নিয়ে কাজ করছি। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হচ্ছে নতুন চ্যানেল তৈরির বিষয়ে।’
গত অর্থবছরে শুধু খুলনা অঞ্চল থেকেই ভারতে এক লাখ ছয় হাজার মেট্রিক টন কাঁচা পাট রফতানি হয়েছিল, যার বিপরীতে আয় হয়েছিল ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাট রফতানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা তৈরির মাধ্যমে এই খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে শুধু অর্থনীতিই নয়, পরিবেশও উপকৃত হবে, কারণ পাট পরিবেশবান্ধব এবং প্লাস্টিকের বিকল্প হতে পারে।
তাই সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, পাট খাতের এই সংকট থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক।
]]>