শনিবার (১৭ মে) সকালে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ২ টার দিকে ‘দালাল মহল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িতে নির্মিত রেস্টুরেন্টের স্থাপনা ও পুরোনো বাড়িতে ভাঙচুর করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি গ্রুপ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার আহ্বায়ক মো. অলি উল্লাহ ও সদস্য সচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়ি মহলে (সুন্দর মহলে) হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে একটি গ্রুপ। এ কর্মসূচি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর আয়োজিত কোনো কর্মসূচি ছিল না। এমনকি ময়মনসিংহ মহানগরের দায়িত্বশীল নেতারা এ ব্যাপারে কোনোকিছুই অবগত নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ বিশেষ করে ময়মনসিংহ মহানগর শাখা সামাজিক সহাবস্থান ও সম্প্রতিতে বিশ্বাস করে। কারো বাড়িঘরে হামলা করার মতো অপরাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার আন্দোলন করছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বিলোপের কথা বলছে, ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমরা মনে করি, কোন একটি স্বার্থান্বেষী মহল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ময়মনসিংহ মহানগরকে বিতর্কিত করার জন্য নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে কারো ব্যক্তিগত জায়গায় হামলা করার মত অপতৎপরতা চালিয়েছে। প্রশাসনের প্রতি দাবি থাকবে, কেউ যদি রাষ্ট্র ও দেশ বিরোধী কিংবা সমাজে অন্যায় কোনো কাজে জড়িত থাকে। তবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যেন আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। তবে অযথা কাউকে যেন হয়রানির স্বীকার করা না হয়।একই সঙ্গে রওশন এরশাদের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় মহানগর শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ওয়ালিদ আহমেদকে (ওলি) শোকজ করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: ব্যানার-ফেস্টুন খোলায় ক্ষুব্ধ ফরিদপুর বিএনপি, ক্ষমা চাইলেন বৈষম্যবিরোধীরা
শোকজের চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি আপনার ব্যপারে সংগঠনের শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি ভঙ্গ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগরের ভাব মূর্তিকে ক্ষুন্ন করেছে। আপনার এই আচরণ কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে এবং বিষয়টি গুরুতরভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেন আপনাকে বহিষ্কার করা হবে না, তার উপযুক্ত কারণ ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করতে ব্যর্থ হলে সংগঠন কর্তৃক আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ওয়ালিদ আহমেদ (ওলি) বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি শোকজের চিঠি পেয়েছি। কিন্তু যারা চিঠি দিয়েছেন, তারা আমাকে শোকজ করার এখতিয়ার রাখেন না। বিষয়টি আমি কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রওশন এরশাদের বাড়ির বিষয়টি সবাই অবগত। রওশন এরশাদের দালাল মহলের কার্যক্রম সম্পর্কে সবাই অবগত। কিন্তু তারা ওপরের ফোন পেয়ে ভয় পেয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এই চিঠি জারি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি তাদের (আহ্বায়ক-সদস্যসচিব) সঙ্গে আজকেই আলোচনায় বসব।’
এ ব্যাপারে মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. অলি উল্লাহ বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে জুলাইয়ের/২৪ স্পিরিটকে ধারণ করে দেশবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষাপূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই প্লাটফর্ম যেন কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা বিশ্বাস করি ব্যক্তির চাইতে সংগঠন বড়। বিগত দিনে জাতীয় পার্টি ও বেগম রওশন এরশাদের বিতর্কিত কাজের বিচার জনগণ করবে। রাষ্ট্রবিরোধী ও দেশবিরোধী কাজে জাতীয় পার্টির যেসব নেতাকর্মী জড়িত ছিল তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যেন যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা হয় সেজন্য আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোরালো দাবি জানাই। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদের পৈত্রিক বাড়ি ভাঙার যে ঘটনা তার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর কমিটি কোনোভাবেই জড়িত নয় এবং এ ধরনের কোনো কর্মসূচি আমরা পালন করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়টাকে জড়িয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে যে অপপ্রচার ও সুনাম ক্ষুন্ন করা হচ্ছে আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা সামাজিক সহাবস্থানে বিশ্বাস করি, দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে এ কাজে মহানগর কমিটির কাউকে অবহিত না করে কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সদস্যসচিব ওয়ালিদ আহমেদ ওলি অংশগ্রহণ করায় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তাকে শোকজ করা হয়েছে। ৩ দিনের মধ্যে যথাযথ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে না পারলে কেন বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ব্যক্তির অপকর্মের দায় কখনোই সংগঠন গ্রহণ করবে না। এর দায় ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে।’
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে রওশন এরশাদের ‘সুন্দর মহলে’ হামলা-ভাঙচুর
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িটিকে ‘দালাল মহল’ আখ্যায়িত করেন বৈষম্যবিরোধীদের একাংশ। সম্প্রতি ‘কুটুম বাড়ি’ নামে একটি রেস্তোরাঁর মালিক বজলুর রহমান ১২ বছরের জন্য রওশন এরশাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। গত ২৩ এপ্রিল বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। তারা বাড়িতে বাণিজ্যিক ভবন না করে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানান। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।