আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে যাত্রীচাপ সামলাতে এসব বাস ঢাকাসহ বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটেও চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, সড়কে এসব বাস দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি জনবল সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নীলফামারী অফিস সূত্রে জানা যায়, ভৌগোলিক কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। স্থানীয় বাসটার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলাসহ রংপুর, দিনাজপুর ও দিনাজপুরের পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, পঞ্চগড় এবং ঢাকা রুটে চার শতাধিক বাস চলাচল করে।
এসবের মধ্যে ২১৭টি বাস ও মিনিবাসের ফিটনেস ও রুটপারমিটের হালনাগাদ সনদ রয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী বিআরটিএ এর অধীন চারটি বাস, ২৩টি মিনিবাস এবং মালিক সমিতির অধীনে ১০৪ বাস ও ৮৬টি মিনিবাস রেজিস্ট্রেশনকৃত। বাকি দেড় শতাধিক বাস-মিনিবাস শর্ত পূরণ করে পরিদর্শন সাপেক্ষে এখনও ফিটনেস বা রুট পারমিট সনদ গ্রহণ করেনি। ফিটনেস ও রুটপারমিট হালনাগাদ করা এই যানবাহনগুলোর বাইরেও বেশ কিছু যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত জটিলতা রয়েছে। সেগুলোও চলছে সড়কে।
রংপুরের তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে সৈয়দপুর ও তারাগঞ্জ এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে ১৯৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় মারা যায় ১৪৬ জন।
আরও পড়ুন: সড়কে অনিয়ম রুখতে রাজধানীতে র্যাবের বিশেষ অভিযান
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ফিটনেসহীন এসব গাড়ির কোনোটির সিট ছেঁড়া বা চেচিস ভাঙ্গা। আবার কোনোটির বডিতে রং নেই। বহু পুরনো এসব গাড়ি মেরামত করে নতুন সাজে রোডে নামানো হয়েছে। ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলো জোড়াতালি ও রং দেয়া হচ্ছে বাসটার্মিনাল সংলগ্ন ওয়ার্কশপগুলোতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়ার্কশপের কারিগর বলেন, ‘পুরনো এসব গাড়ি যতই ঠিক করা হোক রাস্তায় নামানোর পর থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।’
তবে একথা মানতে রাজি না বাস মালিকরা।
তারা জানান, রোডে বাস চললে ছোটখাটো ত্রুটি হতেই পারে। একটি ইঞ্জিন ও চেসিসের মেয়াদ ন্যূনতম ২০ বছর। এর আগে তেমন কিছু হয় না। তাদের দাবি, রোডে যে দুর্ঘটনাগুলো হয় সাধারণত অসচেতনতার কারণে ও ড্রাইভারদের অসম প্রতিযোগিতার কারণে।
সৈয়দপুর শহরের রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমি দিনাজপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সৈয়দপুর থেকে প্রতিদিন বাসে করে দিনাজপুরে যাই। কিন্তু অধিকাংশ বাসই লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা। অনেকটা বাধ্য হয়ে যেতে হয়। প্রতিদিন আমার মতো হাজার হাজার যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব বাসে এখান থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করছেন।’
নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার বলেন, ‘আমরা মালিক সমিতি থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে গাড়ির মালিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছি, যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া তারা যেন তাদের যানবাহন রাস্তায় না নামায়। ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন কোনোভাবেই সড়কে না নামানো হয়। যারা নামাবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ তারাও যেন ওই মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন গণপরিবহন
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নীলফামারীর সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এরইমধ্যে জেলার সব বাস-মিনিবাস মালিকদের নিয়ে একটি সভা করেছি। তাদেরকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে না চালানোর জন্য সতর্ক করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তবে জেলার পরিবহন সেক্টরে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধ করতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত এক বছরে ১৯৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে অধিকাংশই ঘটেছে ফিটনেসবিহীন বাস-মিনিবাস কারণে।