যেভাবে দোয়া করলে কবুল হয়

১ সপ্তাহে আগে
মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা স্বতন্ত্র ইবাদত। দোয়া আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে: ডাকা, আহ্বান করা ও চাওয়া। পৃথিবীতে কারও কাছে বার বার কিছু চাইলে সে অসন্তুষ্ট হয়; কিন্তু মহান আল্লাহর কাছে না চাইলে তিনি অসন্তুষ্ট হন। তাই আমাদের সবকিছু মহান আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।

দোয়া করার কয়েকটি আদব ও নিয়ম রয়েছে, যা পালন করলে আশা করা যায় দোয়া কবুল হবে--

 

একনিষ্ঠভাবে দোয়া করা

 

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, সুতরাং আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে তাকে ডাক, যদিও অবিশ্বাসীগণ এটা অপছন্দ করে।

 

দোয়ার শুরুতে মাঝে ও শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা ও দরুদ পড়া

 

যেমন আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ বলা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ দোয়া করবে, তখন তার উচিত আল্লাহর হামদ ও সানা দিয়ে শুরু করা, অতঃপর নবীর ওপর দরুদ পড়া, অতঃপর ইচ্ছামত দোয়া করা।’ (তিরমিজি ৫/৫১৬)

 

তড়িঘড়ি না করা

 

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বান্দা যতক্ষণ কোনো গোনাহ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদের দোয়া না করে এবং তড়িঘড়ি না করে, ততক্ষণ তার দোয়া কবুল হতে থাকে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, 'তড়িঘড়ি দোয়া করার অর্থ কী?

 

তিনি বললেন, এর অর্থ হলো- এরূপ ধারণা করা যে, আমি এত দীর্ঘক্ষণ থেকে দোয়া করছি, অথচ এখন পর্যন্ত কবুল হলো না। এরপর নিরাশ হয়ে দোয়া ত্যাগ করা।' (মুসলিম, তিরমিজি)

 

দোয়া কবুলের সময় দোয়া করা

 

দোয়া কবুলের সময় হলো- রাতের শেষ তৃতীয়াংশে, সেজদায়, আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়, নামাজের পর, জুমার দিন আসরের পরবর্তী সময়, আরাফাতের দিন এবং ইফতারের সময় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদার ব্যাপারে বলেছেন, ওই সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি হয়। তাই বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।' (মুসলিম)

 

সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দোয়া করা

 

দোয়াকে অনির্দিষ্ট করা উচিত নয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা এরূপ বলো না যে, আল্লাহ যদি তুমি চাও; আমাকে মাফ করো। বরং চাওয়াকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। কেননা আল্লাহকে বাধ্য করার কেউ নেই।' (মুসলিম)

 

কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা

 

কোনো সময় দাঁড়িয়ে সামষ্টিকভাবে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করার কথাও বর্ণিত আছে। বিশেষ করে জুমার দিন আজানের সময় বা আজান পরবর্তী সময়ে নামাজের আগে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করার ব্যাপারে তাগিদ রয়েছে।

 

আরও পড়ুন: তাওয়াফ শেষে কাবার দিকে পিঠ দিয়ে কি বের হওয়া যাবে?

 

দোয়া কবুলের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা

 

অজুর সঙ্গে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার সেই দোয়া কবুল করেন।

 

দোয়ার মধ্যে ইসমে আজম পড়া

 

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন একজন লোক নামাজ পড়ছিল। সে বললো-

 

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أَسْأَلُكَ بِاَنَّ لَكَ الْحَمْدُ لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ الْحَنَّانُ الْمَنَّانُ بَدِيْعُ السَّمَوَاتِ وَ الْاَرْضِ يَاذَا الْجَلَالِ وَ الْاِكْرَامِ يَا حَىُّ يَا قَيُّوْمُ اَسْأَلُكَ

 

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আংতাল হান্নানুল মান্নানু বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ইয়াজাল ঝালালি ওয়াল ইকরামি ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু আসআলুকা।

 

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। সব প্রশংসা তোমার জন্য। তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তুমি স্নেহ ও দয়া দানকারী। আসমান ও জমিনের স্রষ্ঠা তুমি। হে সম্মান ও শ্রদ্ধার মালিক! হে চিরঞ্জীব ও চির অবস্থানকারী তোমার কাছে আশ্রয় চাই।'

 

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে ইসমে আজম পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছে। ইসমে আজমের সঙ্গে দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং প্রার্থনা করলে তিনি দান করেন।’ (তিরমিজি ৩৪৭৫)

 

ইসমে আজমের সঙ্গে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সেই দোয়া কবুল করেন মর্মে হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত।

 

আশা ও ভয়ের সঙ্গে দোয়া করা

 

দোয়া কবুলের জন্য আশা রাখা। আগ্রহরে সঙ্গে দোয়া করা। দোয়া কবুলের জন্য আল্লাহকে ভয় করা। আশা-আগ্রহ ও ভয়ের সঙ্গে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন।

 

আরও পড়ুন: এক রসুল প্রেমিকের বিস্ময়কর গল্প


জিকির দ্বারা দোয়া শুরু করা

 

আল্লাহর জিকির বা স্মরণ দ্বারা দোয়া শুরু করা। শুরুতেই কোনো কিছু না চাওয়া। হাদিসে এসেছে-

 

হজরত সালমা বিন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাকে কখনও এই কালেমা না বলে দোয়া শুরু করতে শুনিনি।

 

যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোনো প্রার্থনা করতে চায়, তার উচিত, প্রথমে দরুদ পড়া এবং দরুদ দ্বারা দোয়া শেষ করা। কেননা আল্লাহ তাআলা উভয় দরুদ কবুল করেন।

 

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে চাও তখন আমার প্রতি দরুদ পড়। আল্লাহর শান এরূপ নয় যে, কেউ তাঁর কাছে দুইটি জিনিস চাইলে একটি পূর্ণ করবেন এবং অপরটি পূর্ণ করবেন না।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন