যে পরিবারের সবাই শিশু, কেমন তাদের ঈদ আনন্দ!

৩ সপ্তাহ আগে
ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। আর এই আনন্দ যখন শত এতিম শিশুর চোখে-মুখে ভেসে ওঠে, তখন তা যেন হয়ে ওঠে এক অনন্য দৃশ্য।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের কুমড়ি এলাকায় অবস্থিত নেত্রকোনা সরকারি শিশু পরিবারে (বালক)- এমনই এক ঈদের চিত্র দেখা গেছে— যেখানে যেন নেই কষ্টের ছাপ, নেই একাকীত্বের হাহাকার, বরং পুরো পরিবেশে বইছে ভালোবাসা আর সম্প্রীতির উচ্ছ্বাস।


জায়গাটিকে অনেকে ‘এতিমখানা’ বললেও বাস্তবে এটি যেন একটি মমতাময় পরিবার। কেউ হয়তো মা-বাবাকে হারিয়েছে, কেউ জানেই না তাদের পরিচয়, তবু এই পরিবারের শিশুদের ঈদ উদযাপন দেখে বোঝার উপায় নেই তাদের জীবনে এমন শূন্যতা আছে। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেমাই খেয়ে, নতুন পাঞ্জাবি পরে ক্যাম্পাসেই জামাতে অংশ নেয় শত শিশু। এ জামাতে অংশ নেন স্থানীয় বাসিন্দারাও, এমনকি যারা এই জমি দান করেছেন তাদের উত্তরসূরিরাও প্রতিবছর আসেন শিশুদের সঙ্গে ঈদ ভাগাভাগি করতে।


নামাজ শেষে শুরু হয় কোলাকুলি, বুকভরা ভালোবাসা আর আন্তরিকতা। শত শিশু শিক্ষক, ইমাম ও অতিথিদের সঙ্গে কোলাকুলি করতে করতে লাইন ধরে এগিয়ে যায়, যেন ভালোবাসা বিনিময়ের মিছিলে সামিল হয়েছে তারা। এরপর সবাই নতুন পোশাকে সজ্জিত হয়ে আবারও ঈদ আনন্দে মেতে ওঠে। কেউ দোলনায় চড়ে, কেউ রাইডে, কেউ খেলাধুলায়।


দুইটি ষাঁড় গরু কোরবানির মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাসে মাংস বণ্টন হয়, আর যাতে কোনো শিশু বাইরে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর কিছু না খায়, সেজন্য শিশুদের ব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পাসেই একটি ছোট দোকানের ব্যবস্থা থাকে।


আরও পড়ুন: কেরানীগঞ্জে কারাবন্দিদের সঙ্গে পরিবারের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি


চারটি বোডিংয়ে ১০০ জন শিশু সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠে এখানে। তাদের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, বিনোদন— সব কিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদের দিনে সেই বন্দোবস্ত হয় আরও জাঁকজমকপূর্ণ।


এ পরিবারেরই এক সদস্য রাব্বী বলেন, ‘প্রথমে এখানে এসে মন খারাপ লাগত, বাড়ির জন্য কাঁদতাম। কিন্তু এখন মনে হয় এটাই আমার পরিবার। অনেকেই চাকরি পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়, কিন্তু ঈদের দিনে সবাই আবার এই পরিবারের টানে ছুটে আসে।’


এই প্রতিষ্ঠানের উপতত্ত্বাবধায়ক তাহের হোসেন বলেন, ‘আমি এই শিশুদেরকেই নিজের সন্তান মনে করি। ওরা আমাকে বাবা বলেই ডাকে। আমি নিজ বাড়ির পরিবারকে সময় দিই ঈদের পরে। ঈদের দিন আমি এখানেই থাকি ওদের সঙ্গে। এখানকার অন্য শিক্ষকরাও আমার সঙ্গে থাকেন।’


প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৩ সালে পারলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০১ সালে বর্তমান ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়। এক সময় পিছিয়ে পড়া এই প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের অন্যতম মডেল শিশু পরিবারে পরিণত হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে এটি মডেল শিশু পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পায়।


সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত দেশের ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারের মধ্যে নেত্রকোনার এই প্রতিষ্ঠান এখন অন্যতম সেরা। এখানকার মনোরম পরিবেশ, আন্তরিক তত্ত্বাবধান ও ভালোবাসায় বেড়ে উঠছে শত শত এতিম শিশু— যাদের কাছে ঈদ মানেই পরিবার, ভালোবাসা, আর আনন্দে ভরা এক উজ্জ্বল দিন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন