শনিবার হামাস নাজুক যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে আরও তিনজন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গাজা ভূখন্ড দখল নেওয়ার বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত মাসে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এটি পঞ্চম বিনিময়।
৫২ বছর বয়সী এলি শরাবি এবং ৫৬ বছর বয়সী ওহাদ বেন আমি, দুজনই কিবুতজ বেইরির একটি সমবায় খামার থেকে অপহৃত হন, আর ৩৪ বছর বয়সী ওর লেভি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় নোভা সংগীত উত্সব থেকে অপহৃত হন।
অন্যদিকে, ইসরায়েল শনিবার আরও পরের দিকে আরও ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে, যা ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হওয়ার কথা, শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে হামাস পর্যায়ক্রমে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিবে। এখন পর্যন্ত, হামাসের হামলার সময় অপহৃত ১৩ জন ইসরায়েলি বন্দি এবং পাঁচজন থাই শ্রমিক মুক্তি পেয়েছে, এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ৬০০ বন্দি, যাদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি, মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
শনিবারের বন্দি বিনিময়টি ট্রাম্পের এ রকম প্রস্তাবের পর আসে, যেখানে তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের তাড়িয়ে দেওয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রকে অঞ্চলটির মালিকানা দেওয়ার কথা বলেন। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সফররত জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সাথে বৈঠকের আগে সংবাদদাতাদের ট্রাম্প বলেন, তার পরিকল্পনাটি একটি রিয়েল এস্টেট লেনদেন হিসেবে দেখা উচিত। তবে তিনি পরিকল্পনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি এবং বলেন, ‘’আমাদের এই ব্যাপার নিয়ে তাড়াহুড়া নেই।"
গাজা সম্পর্কিত তার প্রস্তাব নিয়ে একটি প্রশ্নের জবাবে, ট্রাম্প বলেন, তার পরিকল্পনাটি "খুব ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।" আর যেমনটি তিনি কল্পনা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ওই অঞ্চলে "সেনা মোতায়েন" করতে হবে না, কারণ ইসরায়েল সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে হোয়াইট হাউসের একটি সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবার গাজা দখল পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে, তিনি তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এই পরিকল্পনা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করেন, যেখানে তিনি প্রস্তাব দেন, হামাসের সাথে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলের উচিত হবে গাজা ভূখন্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা।
তিনি বলেন, তাঁর পরিকল্পনার অধীনে সেখানে বসবাসকারী ২০ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি “এরই মধ্যে আরও নিরাপদ এবং সুন্দর সমাজে পুনর্বাসিত হয়ে যেতো।"
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে সফরের সময় এক ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনাটির প্রশংসা করেন এবং বলেন, পরিকল্পনাটি শোনার মতো ছিল এবং "কয়েক বছরের মধ্যে প্রস্তাবিত প্রথম মৌলিক ধারণা"।
এই পরিকল্পনাটি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং বৈরিপক্ষ উভয়ই ব্যাপকভাবে সমালোচনা করে, যাদের অনেকেই ইসরায়েলের পাশে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, যা "দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান" নামে পরিচিত।
জর্দানের আম্মানে শুক্রবার এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে একটি সড়কে বড় রকমের প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম ব্রাদারহুড এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর আয়োজিত এই সমাবেশে মিছিলকারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পোস্টার এবং ব্যানার প্রদর্শন করেন এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দেন।
বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ট্রাম্পের ধারণাকে "সাহসী পরিকল্পনা" বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, তিনি ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় গাজা ভূখন্ড ছেড়ে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা "তাদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুক যে কোনও দেশে যেতে পারেন।"