শুক্রবার ভারত জানিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমানোর জন্য কাজ করছে, যাতে এই বছর ওয়াশিংটনের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি অর্জন করতে পারে।
ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে একটি বৈঠক শেষে, দুই দেশ জানায় তারা ২০২৫ সালের শরৎকাল নাগাদ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার সংবাদদাতাদের জানান, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির উদ্দেশ্য হবে “ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পণ্য এবং সেবা খাতে দ্বি-মুখী বাণিজ্যকে শক্তিশালী এবং গভীর করা, বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধি, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা হ্রাস করা এবং দুই দেশের মধ্যে সরবরাহ চেইন সমন্বিত ও আরও গভীর করা।”
ট্রাম্প দিল্লির বিরুদ্ধে উচ্চ শুল্কের মাধ্যমে অস্বাভাবিক বাণিজ্য বাধা আরোপ করার অভিযোগ করেন এবং ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, ভারত সব ধরনের গাড়ি আমদানিতে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, “ভারত আমাদের ওপর বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপ করে। বিপুল। আপনি ভারতে কিছু বিক্রিও করতে পারবেন না। তারা সম্মত হয়েছে। যাইহোক, তারা এখন তাদের নিজেদের শুল্ক অনেক কমাতে চায় কারণ অবশেষে তারা যা করেছে কেউ সেটা উন্মোচন করছে।”
ভারতীয় কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সমঝোতার পদক্ষেপ
বিশ্লেষকরা বলেন, ভারত শুল্ক নীতি নিয়ে একটি সমঝোতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা শুরু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ভারত ইতোমধ্যে কিছু আমদানির উপর শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে, যেমন উচ্চমানের মোটরসাইকেল এবং বারবন, যা আমেরিকার কোম্পানিগুলোর উপকারে আসবে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক বাণিজ্য বিশ্লেষক বিশ্বজিত ধর বলেন, “প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র হল ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার, তাই আমরা তা ব্যাহত করতে চাই না। এরপর আরো কিছু বিষয় নিয়ে বিবেচনার দরকার রয়েছে। এমন একটি ধারণা রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি মূল্যবান কৌশলগত অংশীদার, তাই আমরা চাইও না বাণিজ্যিক উত্তেজনা সেই ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করুক।”
যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে ভারত এতদিন শুল্ক থেকে রেহাই পেয়েছে, তবে ট্রাম্প বলেছেন তিনি আগামী মাসের শুরুতে পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে ঘোষণা করবেন। এই শুল্ক ঔষধ ও ঔষধ শিল্প থেকে শুরু করে যানবাহনের যন্ত্রাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানিকে প্রভাবিত করতে পারে। গত বছরে দুই দেশের মধ্যে পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি, যেখানে ভারতীয় রপ্তানি ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিযুষ গোয়েল এই সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করেন এবং বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক সহ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
একটি ভারতীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে দেওয়া মন্তব্যে লুটনিক ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের “বিশেষ সম্পর্কের” কথা উল্লেখ করে দেশটিকে তাদের শুল্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।"
তিনি শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে ইন্ডিয়া টুডে টিভি-কে বলেন, “এখন বড়, বিস্তৃত কিছু করার সময়, যা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে একসাথে সংযুক্ত করবে, কিন্তু তা পণ্যভিত্তিক না হয়ে সামগ্রিকভাবে, আরও বিশাল মাত্রায় হওয়া উচিত। ”
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়
তিনি আরও বলেন, ভারতকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি সরঞ্জাম কিনতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম কেনার মাধ্যমে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের বাণিজ্যিক ঘাটতি কমাতে সহায়তা করতে পারে, যা গত বছর ৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি ছিল।
লুটনিক আরও বলেন, তিনি চান ভারত তাদের বাজার যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের রপ্তানির জন্য উন্মুক্ত করুক। তবে নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে এতে আপত্তি জানিয়ে আসছে, কারণ এর ফলে দেশের কোটি কোটি ক্ষুদ্র কৃষকের ক্ষতি হতে পারে বলে আশংকা করা হয়।