যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের এক সপ্তাহ বাকি, হ্যারিস ট্রাম্পের পরস্পরকে আক্রমণ

৩ সপ্তাহ আগে
সব চেয়ে প্রতিযোগিতামূলক, সব চেয়ে বিতর্কমূলক যুক্তরাষ্ট্রের এবারকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। ডেমক্র্যাটিক দলীয় প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের কাছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোটারদের সামনে তাঁর কথিত “ সমাপ্তি যুক্তি” তুলে ধরছেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভেনিয়ায় প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন। পেনসিলভেনিয়া হচ্ছে সাতটি অঙ্গরাজ্যের একটি যেগুলি প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং সামগ্রিক ভাবে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে। উভয় প্রার্থীই আগামি চার বছরের এই নতুন মেয়াদে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার অনুপুযুক্ত বলে পরস্পরের অবমূল্যায়ন করছেন। কয়েক দশকের মধ্যে এই যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হতে চলেছে তাতে যে সব ভোটদাতা কাকে ভোট দেবেন বলে স্থির করেননি তাদের কাছ থেকে উভয়ই ভোটের সুবিধা চাইছেন। জরিপে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে হ্যারিস ও ট্রাম্প উভয়ই সমান সমান অবস্থানে রয়েছেন কিংবা খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন অথবা পিছিয়ে আছেন । তবে এর সবটুকুই সংখ্যাতাত্বিক হিসেব. এতে ভুল হতেও পারে। এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের প্রত্যেকটিতেই কয়েক হাজার ভোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে  উঠতে পারে।   হ্যারিস ও ট্রাম্পের শেষ মূহুর্তের ভাষণ সেই সব ভোটারদের একদিকে কিংবা অন্যদিকে ভোটদানে আগ্রহী করে তুলতে পারে যারা এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। তবে এই নির্বাচনী প্রচার অভিযানে তারা তাদের প্রতিশ্রুতিশীল ভোটদাতাদের শিগগিরই ভোটদান করতে কিংবা নির্বাচনের দিনে ভোট দিতে বলছেন যা কীনা ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকশান ল্যাব জানিয়েছে যে আগামি মঙ্গলবারের আগেই প্রায় ৪ কোটি ৯০ লক্ষ লোক ভোট কেন্দ্রে  গিয়ে কিংবা ডাক মারফত আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে সাড়ে ১৫ কোটি লোক ভোট দেন। পেনসিলভেনিয়ার অ্যালেনটাউনের দিকে যাবার আগে ট্রাম্প সমুদ্রপারে ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগোতে বক্তব্য রাখেন। তিনি হ্যারিসকে , “ মারাত্মক ভাবে অযোগ্য, সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক” বলে বর্ণনা করেন। তবে ট্রাম্প সংবাদদাতাদের কাছ থেকে কোন প্রশ্ন নেননি এবং গত রবিবার নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে টনি হিঞ্চক্লিফের এই কৌতুকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি যেখানে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের হিস্প্যানিক অঞ্চল পিউর্টো রিকো হচ্ছে , “ আবর্জনার ভাসমান দ্বীপ”। ট্রাম্পের নির্বাচনী অভিযান এই কৌতুক থেকে দূরে থাকছে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি তবে এবিসি নিউজকে বলেন, তিনি হিঞ্চক্লিফকে চেনেননা। তিনি বলেন, “ কেউ তাকে সেখানে নিয়ে এসেছিল, আমি জানিনা সে কে”।   ওই দ্বীপে বসবাসরত পিউর্টে রিকার লোকজন আমেরিকান কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলে বাস করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কোন অঙ্গরাজ্যে বাস করেন না অতএব তারা ভোট দিতে পারেন না। তবে ওই দ্বীপে বড় হয়ে ওঠা হাজার হাজার লোক এবং তাদের স্বজনরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের  মূল ভূখন্ডে চলে এসেছেন এবং তাঁরা যে অঙ্গরাজ্যে থাকুন না কেন, তাঁরা ভোট দিতে পারেন। কোন কোন তীব্র প্রতিযোগিতামূলক রাজ্যে হাজার হাজার  পিউর্টে রিকানদের ভোট ফলাফল নির্ধারনেনর জন্য গুরুত্বপূর্ণ । হ্যারিসের নির্বচানী প্রচার অভিযান দ্রুতই ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে যেখানে তারা বলছেন, “ ল্যাটিনো ভোটারদের সাবেক প্রেসিডেন্ট যে  ভাবে দেখেন তার চেয়ে অনেক “ভাল প্রাপ্য” তাদের। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে উভয় প্রার্থীই দেখছেন কেবল পেনসিলভেনিয়া রাজ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেখানেই ৩,০০০০০ পিউর্টো রিকান ভোটদাতা রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচার অভিযানে হ্যারিস ও ট্রাম্প উভয়ই পরস্পরকে অপমান করেছেন। ট্রাম্প হ্যারিসকে এমন একজন বলে উল্লেখ করেন যার ‘আই কিউ’ খুব কম এবং বলেন বিশ্বের অন্যান্য নেতার কাছে তিনি “ খেলনার পুতুল” হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন , “ তারা তাকে  সবটুকু ব্যবহার করবে”। আবার ট্রাম্পের ২০১৭-২০২১ আমলের সাবেক শীর্ষ কিছু সহযোগী তাকে ফ্যাসিবাদী বলে বর্ণনা করেছেন যিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদে কর্তৃত্ববাদী হিসেব শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করেন। হ্যারিস বলেন এই বর্ণনার  সঙ্গে তিনি সহমত। ট্রাম্পও পাল্টা হ্যারিসকে একই ভাবে বর্ননা করেন। হ্যারিস এলিপ্স’এ তাঁর ভাষণের আগে ৫ টি সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন যেখানে তিনি ট্রাম্পকে আমেরিকান গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হিসেবে তুলে ধরবেন। স্থানীয় পুলিশ অনুমান করছে সেখানে প্রায় ৫০,০০০ লোক উপস্থিত থাকবেন। এলিপ্স হচ্ছে সেই স্থান যেখান থেকে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প তার সমর্থকদের ক্যাপিটলে যেতে বলেছিলেন এবং কংগ্রেস যাতে ডেমক্র্যাট জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা না করতে পারে সে জন্য যে কোন মূল্যে লড়াই করতে বলেছিলেন। আমেরিকার সরকারের মূল স্থানে তাদের ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য ১৫০০ ‘র ও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই ঘটনায় ১৪০ জন আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তি আহত হন এবং ক্যাপিটলে ২৯ লক্ষ ডলারের সম্পত্তির ক্ষতি হয়। ১,০০০ ‘এর ও বেশি দাঙ্গাকারীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং এদের মধ্যে যারা গুরুতর অপরাধ করেছে তাদেরকে কয়েক বছরের জন্য কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। ট্রাম্প বলছেন নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।   হ্যারিসের প্রচারাভিযান বলছে যে তিনি তাঁর ভাষণে এ কথাই তুলে ধরবেন যে ট্রাম্প “ আমেরিকান জনগণের পরিবর্তে নিজের উপর এবং তাঁর “ শত্রুদের তালিকার” উপরই বেশি নজর দিবেন” কিন্তু হ্যারিস “প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকার দিকে নজর দিবেন যাতে ব্য় কমানো যায় এবং আমেরিকানদের জীবন যাপনে সাহায্য করা যায়”। হ্যারিস প্রায়ই বলেছেন যে এখন সময় এসেছে ট্রাম্পযুগের “ পাতা উল্টানোর”।   যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বচানের ফলাফল সরাসরি জাতীয় ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় না বরঞ্চ ইলেক্টরাল কলেজ তা নির্ধারণ করে। ৫০ টি অঙ্গরাজ্যের হিসেবে এই প্রতিযোগিতা হয়, ৫০ টি অঙ্গ রাজ্যের মধ্যে ৪৮টি তাদের  রাজ্যে বিজয়ীকে, হ্যারিস কিংবা ট্রাম্প, যিনিই হোন সব ইলেক্টরাল ভোট প্রদান করে। নেব্রাস্কা ও মেইন রাজ্য দু’টি তাদের রাজ্যের ও কংগ্রেসানাল ডিস্ট্রিক্টের ভোট প্রদান করে। প্রত্যেক রাজ্যের ইলেক্টরাল ভোট তাদের মোট জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।  প্রেসিডেন্ট পদে জয় লাভ করতে হলে মোট ৫৩৮ টি ইলেক্টরাল ভোটের মধ্যে ২৭০ টি ইলেক্টরাল ভোটের প্রয়োজন পড়ে।  
সম্পূর্ণ পড়ুন