কিশোর রাব্বী হোসেন, দারিদ্র্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে অভাব-অনটনের সংসারে অর্থের যোগান দিতে চালাতো অটোরিকশা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়ে তার প্রতিটি ক্ষণ কাটছে শারীরিক যন্ত্রণায়।
৫ আগস্ট সরকার পতনের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে অন্য সবার মতো আনন্দ মিছিলে যোগ দেয় মৌলভীবাজারের রাব্বী। কিন্তু অতর্কিত ছোররা গুলিবর্ষণে তার শরীর মুহূর্তেই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের পর বেঁচে গেলেও একটি চোখ গুলির আঘাতে নষ্ট হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অপর চোখটির অবস্থাও ভালো নয়। সুচিকিৎসার অভাবে অসহ্য যন্ত্রণায় পার হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত। সেদিনের ঘটনায় অন্তত ৫ জন গুলিবিদ্ধ হন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত রাব্বী হোসেন বলেন, ‘আমার শরীরে প্রায় ৫০-৬০টি বুলেট ছিল। চামড়া ওপরে যেগুলো ভেসে ছিল এর কিছু আমি বের করেছি, কিছু মেডিকেল থেকে বের করা হয়েছে। আমার বা আমার পরিবারের কাছে চিকিৎসার টাকাও ছিল না। আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার মানুষের সহযোগিতায় আমার তখনকার চিকিৎসার খরচ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে আমার এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। অপর চোখও দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ছাত্র আন্দোলনে হামলা: কিশোরগঞ্জে হাসিনা ও হামিদের বিরুদ্ধে মামলা
রাব্বী ছাড়াও এমন নির্মমতার শিকার আরও অনেকে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় অনেকের রক্তে রাজপথ হয় রক্তাক্ত। আরিফ আহমেদ এমনই একজন। কোনো মতে প্রাণে বেঁচে গেলেও যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। আক্ষেপ, এখনও মেলেনি তেমন কোনো সহায়তা, পাওয়া হয়নি মর্যাদা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত আরিফ আহমেদ বলেন, ‘আমার আব্বু কৃষক। এ দিয়েই আমাদের পরিবারের খরচ চলে। আর আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট্ট একটা চাকরি করতাম। কিন্তু আন্দোলনের পর থেকে কাজে যেতে পারিনি। ফলে পরিবারে অভাব দেখা দিয়েছে। আর আমার চিকিৎসাও ঠিকভাবে চলছে না।’
হতাহত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকা করে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।’
জেলায় শতাধিক আহতের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১২০ জন। আর বিভিন্ন পর্যায়ে এ পর্যন্ত ২৬টি মামলা হয়েছে।