সরেজমিনে অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার প্রায় ১৯ বর্গ কিলোমিটারের বাসা-বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত একশ টন বর্জ্য তৈরি হয়। পলিথিনসহ এসব পচনশীল বর্জ্য অপসারণ করতে গিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় ২০২৩ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকায় ছয়বাড়ীয়ায় বর্জ্য থেকে জৈব সার এবং পলিথিন থেকে তরল জ্বালানি উৎপাদনের কেন্দ্র স্থাপন করেন পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু চালুর কয়েক মাসের মাথায় প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।
এতে করে ময়লার স্তূপে জমে পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ছয়বাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা ও কাট মিস্ত্রি কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের পাশেই বিশাল ময়লার পাহাড়। পচা দুর্গন্ধে আমরা এখানে কাজ করতে পারছি না। মনে হয় অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যাবে। এ ময়লাগুলো যদি অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো তাহলে ভালো হয়। এছাড়া এখানে যে জৈব সার কারখানা আছে সেটি বন্ধ থাকার কারণেও এখানে প্রচুর ময়লা জমে আছে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি।’
আরও পড়ুন: পৌরসভার ময়লার ট্রাক্টরের চাপায় প্রাণ গেল পরিচ্ছন্নতা কর্মীর
আশরাফুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ক্রিকেটার বলেন, ‘এ ময়লার পাহাড় আমাদের জন্য অনেক বড় অভিশাপ। আমরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারি না। সকালে খেলার মাঠে যেতে পারি না। বাজারে যেতে পারি না। একবছর ধরে জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ থাকার কারণে ময়লা জমে জমে পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। আর বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের মতো সব ময়লা রাস্তার ওপরে চলে আসে। এই রাস্তায় চলাচল করা যায় না। আমরা দাবি জানাই যেন দ্রুত এই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। অন্যথায় আমরা এটি নিয়ে আন্দোলনে যাব।’
বাবুল মিয়া নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে আমাদের বাড়ি আছে। কিন্তু ময়লার দুর্গন্ধে বাড়ির দরজা জানালা খুলতে পারি না। সবসময় দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হয়। এই ময়লার কারণে বাড়িতে কোনো আত্মীয় স্বজনও আসতে পারে না। আমরা বড় ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েও ভেঙে গেছে এ ময়লার কারণে।’
জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্রের ঠিকাদার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এই উৎপাদন কেন্দ্রটি প্রথম ছয় মাস আমরা চালিয়েছি। পরে সেটি পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে সমস্যা হচ্ছে, উন্নত দেশে পচনশীল বর্জ্য এবং অপচনশীল বর্জ্য আলাদা বিনে থাকে। কিন্তু এখানে সব বর্জ্য একসঙ্গে থাকার কারণে বর্জ্যগুলো আলাদা করতে যে পরিমাণ খরচ হয় ঠিকাদারের পক্ষে সেটি বহন করা সম্ভব নয়। তাই মূল ঠিকাদার ১০ লাখ টাকা লস দিয়ে চলে গেছেন। সরকার চাইলে বর্জ্য আলাদা করার মত কিছু করলে তাহলে এই প্রকল্প চালানো সম্ভব।’
পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী মো. কাউছার আহম্মেদ বলেন, ‘এই উৎপাদন কেন্দ্রটি প্রথম ছয় মাস ঠিকাদাররা চালিয়েছে। পরে আমাদের না শিখিয়ে দিয়ে তারা চলে গেছে। যার কারণে বর্তমানে সেটি বন্ধ আছে। পচনশীল বর্জ্য এবং অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করা যাচ্ছে না। তাই সেটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে দুগন্ধে মানুষেরও অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা দক্ষ কোনো দলও পাচ্ছি না। তবে এটি চালু করা গেলে পৌরবাসীর জন্য অনেক উপকার হতো।’
আরও পড়ুন: ‘ময়লার ডিপোর উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ’ নিয়ে দ্বন্দ্বে জসীমকে হত্যা, বলছে পুলিশ
পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, ‘এই দুর্গন্ধ আমাদের পরিবেশের জন্য অনেকটাই ক্ষতিকর। গৃহস্থলি বর্জ্য সংগ্রহ করা এটি পুরোটাই পৌরসভার কাজ। পরিবেশ অধিদফতর এই কাজ করে না। বড় বড় শহরগুলোতে কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। আমরা পরিবেশ অধিদফতর উদ্যোগ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করেছি। কিন্তু এগুলো ঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে না। আমাদের এই জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র প্রকল্পটি পৌরসভার কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি পৌরসভা এটি পরিচালনা করতে না পারে তাহলে আমাদের প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলে প্রকল্পটি আবারো চালু করা যায় কিনা, সেটি আলোচনা করতে হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় অসংখ্য লোক বাস করে। পৌরসভার বাসাবাড়ির সব ময়লা ছয়বাড়ীয়া এলাকার ডাম্পিং স্টেশনেই জমা হয়। সেখানে ময়লা থেকে জৈবসার উৎপাদনের একটি প্রকল্প ছিল। প্রকল্পটি এখন বন্ধ। আমরা পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলব পুরনায় চালু করা যায় কিনা। আশা করি ভালো কিছু হবে।’
]]>