ময়লা ফেলার জায়গা নেই নীলফামারী পৌরবাসীর

৩ সপ্তাহ আগে
এক সময় ‘নিজের শহর নিজে গড়ি’ স্লোগানে ব্যাপক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু বাস্তবে আজ তা রূপ নিয়েছে হতাশায়। প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে নীলফামারী পৌর এলাকায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্থাপিত ৩৬৫টি মিনি ডাস্টবিন এখন আর কোনো কাজে আসছে না শহরের বাসিন্দাদের। অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা, ভাঙা কিংবা চুরি হওয়া ডাস্টবিনগুলো এখন যেন পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার প্রতীক।

নীলফামারী পৌরসভার আয়তন ২৪ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। প্রায় ৭০ হাজার জনসংখ্যার এই শহরে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য। কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে তা এখন রূপ নিচ্ছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।


প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বাজার এলাকাতেও চোখে পড়ে অব্যবহৃত ও ভাঙাচোরা ডাস্টবিনের চিত্র। কিছু ডাস্টবিন এখনও টিকে থাকলেও তার চারপাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে গৃহস্থালি বর্জ্য। পৌর ভবনের পাশেই স্তূপ করে রাখা আছে শতাধিক ভাঙা ডাস্টবিন, যা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেয় রক্ষণাবেক্ষণের কতটা ঘাটতি ছিল প্রকল্পটিতে।


পৌরবাসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ডাস্টবিন বসানো হয়েছিল ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এখন এসব ভাঙা পড়ে আছে, রাস্তার পাশে গন্ধ ছড়াচ্ছে। দেখার কেউ নেই। উল্টো আগে যেটা সুবিধা ছিল, সেটাও নাই এখন।


সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক নারী বলেন, ‘বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়া-আনা করতে গিয়ে নাক চেপে চলতে হয়। ডাস্টবিনের পাশে ময়লা পড়ে থাকে, পোকামাকড়, দুর্গন্ধ সব মিলিয়ে অসহ্য অবস্থা।’


মো. মেহেদী হাসান নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যারা নিয়ম মেনে ময়লা ফেলতে চাই, কিন্তু কোথায় ফেলব বুঝতে পারি না। ময়লা ফেলার জায়গা না থাকলে তো মানুষ রাস্তার ধারে ফেলবেই।’


আরও পড়ুন: চামড়ার আড়তে রসালো ফলের বাজার, অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির পরও উপায় নেই বলল পৌরসভা


‘জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব মোকাবিলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পকে সহায়তা করি’ এই উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ বাস্তবায়নে ত্রুটি ছিল শুরু থেকেই। নির্মাণে ব্যবহার করা হয় কম মানের স্টিল, যার কারণে অনেক ডাস্টবিন অল্প সময়েই ভেঙে পড়ে। গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলার সুবিধাজনক ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ বাইরে ফেলতে বাধ্য হয়। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর জনগণকে সচেতন করতে কোনো কার্যকর প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি।


এ বিষয়ে নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ও পরিবেশবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ডাস্টবিনগুলো বাস্তবসম্মত নয়। শহরকে দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, তাদের সচেতন করতে হবে। বাস্তবমুখী পরিকল্পনার অভাবেই প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছে।


আরও পড়ুন: নোংরা আবর্জনায় ভরে গেছে সৈয়দপুর পৌরসভা, ডাম্পিং জোন নেই ১৫ ওয়ার্ডেই


পৌর প্রশাসক মো. সাইদুর ইসলাম প্রকল্পটির ব্যর্থতার কথা অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তি কমাতে আমরা ইতোমধ্যে নতুন ডাস্টবিন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি।’


ডাস্টবিন স্থাপন প্রকল্প পরিচালক মো. দুদু মিয়াও বলেন, ‘চলমান দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত নতুন ও কার্যকর ডাস্টবিন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।’


সামাজিক সংগঠকেরা বলছেন, শুধু নতুন ডাস্টবিন বসালেই চলবে না প্রয়োজন জনসচেতনতা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং জবাবদিহিমূলক প্রশাসন। না হলে এক কোটি টাকা নয়, দশ কোটি টাকাও এই শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে পারবে না।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন