মেসেঞ্জারে কথোপকথন নিয়ে বিরোধে স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাত, আটক ১২ কিশোর

১১ ঘন্টা আগে
পঞ্চগড়ে ফেসবুক মেসেঞ্জারের কথোপকথন নিয়ে বিরোধের জেরে সোহান আলী (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রকে দলবদ্ধভাবে মারধর ও ছুরিকাঘাতের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর স্থানীয়রা ১২ কিশোরকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। এ ঘটনায় থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় ভুক্তভোগী স্কুলছাত্র সোহানের বড় ভাই রশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এর আগে একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার অমরখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে ঘটনাটি ঘটে।

 

সোহান অমরখানা এলাকার বদিনাজোত গ্রামের ভ্যানচালক তরিকুল ইসলামের ছেলে। সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বর্তমানে সে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

 

জানা গেছে, আটক ১২ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। সবাই সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা সাতমেড়া ইউনিয়ন, জগদল বাজার, খালপাড়া, প্রধানপাড়া, বানিয়াপাড়া, চেকরমারীসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। আটকরা পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কালেক্টরেট স্কুল, জগদল উচ্চ বিদ্যালয় ও জগদল আলিম মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র।

 

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রায় ১০ থেকে ১২ দিন আগে একটি ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে সোহানের সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোরদের কথাকাটাকাটি ও গালিগালাজের ঘটনা ঘটে। সোমবার বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে অমরখানা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে অভিযুক্তরা তাকে ঘিরে ফেলে।

 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত নূর হাতে থাকা সাইকেলের ফ্রিহুইল দিয়ে সোহানের মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করে। আরেক কিশোর কাইয়ুম ধারালো ছুরি দিয়ে সোহানের বুকের বাম দিকে আঘাত করতে গেলে সোহান হাত তুলে প্রতিহত করতে চাইলে তার কবজির রগ কেটে যায়। বাকিরা তাকে কিলঘুষি ও লাথি মারে। সোহানের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে ১২ জনকে আটক করে, যদিও হামলাকারী নূরসহ কয়েকজন পালিয়ে যায়।

 

আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ের ইতিহাসে ৫৪ বছরের গৌরবময় ‘২৯ নভেম্বর’

 

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় কিছু অভিযুক্ত গণপিটুনির শিকারও হয়। পরে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামসহ অন্য শিক্ষকরা উত্তেজিত জনতার হাত থেকে আটক কিশোরদের উদ্ধার করে স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির একটি কক্ষে রাখেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান নূরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। খবর পেয়ে পুলিশ বিদ্যালয়ে গিয়ে আটক কিশোরদের হেফাজতে নেয় এবং হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম জব্দ করে।

 

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা সোহানকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেন। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রংপুর মেডিকেলে নেয়ার পথে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

 

ভুক্তভোগীর বাবা তরিকুল ইসলাম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। বড় ভাই রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছোট ভাই ঢাকায় ছিল। ৫-৬ দিন আগে বাড়ি এসেছে পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা শেষে ভাই স্কুল থেকে বের হলে তারা ভাইয়ের মাথা ও বুকে দেশীয় অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে আঘাত করে। বাঁচার জন্য ভাই হাত তুললে তার রগ কেটে যায়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

 

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে আমরা সেই প্রত্যাশা করি।’

 

অন্যদিকে আটক কিশোরদের পরিবারের দাবি, বন্ধুর মারামারির খবর শুনে তারা ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা তাদের আটক করেন। হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা।

 

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আটকরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের নারী ও শিশু ডেস্কে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন