‘ইচ্ছে তো অনেক, আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম!’ মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্টটি করেন সম্প্রতি মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং খুলে পড়ে দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালাম আজাদ। গত রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে ব্যক্তিগত কাজে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। ফার্মগেটে মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিলারের নিচে এলে একটি বিয়ারিং প্যাড তার উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দেশের অন্যতম আধুনিক প্রকল্পের পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে তরতাজা একজন যুবকের প্রাণহানি জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, সবসময় আতঙ্ক কাজ করছে। কখন আবার কোথা থেকে কি খুলে মাথায় পড়ে! মেট্রোরেলের নিচের রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলার সময় বেশি পরিমাণে সতর্ক থাকতে হচ্ছে।
একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে প্রকল্পে ব্যবহার করা বিভিন্ন উপাদানের মান নিয়েও। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ? পাশাপাশি কীইবা বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
মূলত নির্মাণের শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড নিয়ে। ২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবার খুলে পড়ে একটি। তবে সেদিন হতাহত ছিল না। বছর না পেরুতেই আবারও বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়লে এবার প্রাণহানি হয় এক যুবকের।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেল: একাধিকবার খসে পড়ল বিয়ারিং প্যাড, কী পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ?
ঘটনার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে মেট্রোরেলে ব্যবহার করা নির্মাণ সামগ্রী ও এর নির্মাণকাজ নিয়ে। তবে প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক দায় চাপান আগের কর্তৃপক্ষের গায়ে। অভিযোগ করেন, পর্যাপ্ত ট্রায়াল ছাড়াই মেট্রোরেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল তৎকালীন সরকার।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ৬-৯ মাস ট্রায়াল রান পরিচালনা করতে হয়। পৃথিবীর সব দেশেই এটি হলেও, বাংলাদেশে হয়েছে মাত্র ২ মাস।
রোববারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন হাতে এলেই কাজ শুরু করবেন বলেও জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি আরও বলেন, বিয়ারিং প্যাড যেটা ড্যামেজ হয়েছে সেটা পরিবর্তন করা হবে। আর যেগুলো ড্যামেজ হয়নি, সেগুলোও কয়েকটি সার্ভের মাধ্যমে চেক করা হচ্ছে।
এদিকে, দেশের অন্যতম এই মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখা হয়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্ঘটনা অংশের নির্মাণ ত্রুটি আছে কিনা তা নিয়েও তুলেছেন প্রশ্ন। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, ক্যাপাসিটি যাদের রয়েছে, তাদের দিয়ে অডিট করতে হবে। প্রকেল্পর ডিজাইন, নির্মাণ যেখানেই ঘাটতি থাকুক না কেন, সেটির মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের টেকসই ব্যবহারের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ এখন প্রকল্পটির মেইনটেনেন্স ঘন ঘন করতে হবে।
দুর্ঘটনা এড়াতে কাঠামোগত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেকনিক্যাল ও পেশাদার তদারকি বাড়ানোর তাগিদও দেন এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ।
]]>
১ সপ্তাহে আগে
২








Bengali (BD) ·
English (US) ·