মুরগির খোয়াড় থেকে ২ মেছো বিড়ালের ছানা উদ্ধার

৮ ঘন্টা আগে
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে মুরগির খোয়াড়ে ধরা পড়া দুটি মেছো বিড়ালের ছানা অবশেষে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ছানাগুলোকে অবমুক্ত করেন স্থানীয় বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং’ এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর পৌর এলাকার পশ্চিম বালিকান্দি গ্রামের একটি মুরগির খোয়াড় থেকে ছানা দুটি উদ্ধার করেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

 

উদ্ধারকারী টিম ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার বালিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা বিএম শাহীন তার হাঁস-মুরগির ঘরে দুইটি বিড়ালের মতো ছানা দেখতে পান। তিনি ধরতে গেলে ছানাগুলোর নখ ও গায়ের রঙ দেখে সন্দেহ হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং’-এর সদস্যদের জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাচ্চাগুলোকে মেছো বিড়ালের ছানা হিসেবে শনাক্ত করেন।

 

পরবর্তীতে ছানাগুলোকে উদ্ধার করে প্রাথমিক পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণের জন্য দুর্গাপুর বন বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয়।

 

খামার মালিক বিএম শাহীন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার হাঁস-মুরগির খোয়াড় থেকে হাঁস-মুরগি হারিয়ে যাচ্ছিল। ভেবেছিলাম শিয়ালের কাজ। তাই হাঁস-মুরগির সংখ্যা কমিয়ে দিই। রোববার খোয়াড় পরিষ্কার করতে গিয়ে বিড়ালের মতো দুইটি ছানা দেখি। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি নখ বড় এবং গায়ের রঙ ভিন্ন। সন্দেহ হলে বিষয়টি আত্মীয়দের জানাই, তারা স্বেচ্ছাসেবকদের খবর দেয়। পরে জানতে পারি এগুলো মেছো বিড়ালের ছানা।’

 

‘সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং’ সংগঠনের সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছানাগুলো উদ্ধার করি। মুরগির ঘরের ভেতরের জিআই তারে পেঁচিয়ে থাকায় তারা আটকে পড়ে এবং নড়াচড়া করতে পারছিল না। পরে এগুলোকে পরিচর্যার জন্য বন বিভাগের কার্যালয়ে নিয়ে যাই। একদিন যত্নে রাখার পর সোমবার রাতে গহীন বনের জলাশয়ের ধারে ছানাগুলোকে অবমুক্ত করেছি।’

 

আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় অগ্নিকাণ্ডে ৪০ দোকান পুড়ে ছাই

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এর আগে ৫৯টি রেসকিউ অভিযানে অজগর, লজ্জাবতী বানর, বনরুইসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছি। এ বছরের ১৩ জুন একই এলাকায় আরও দুটি মেছো বিড়ালের ছানা উদ্ধার করেছিলাম।’

 

দুর্গাপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মজনু প্রামানিক বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে বনের ভেতর মেছো বিড়ালের দুইটি ছানা অবমুক্ত করেছি। এগুলো মোটামুটি বড় হওয়ায় নিজেরাই শিকার করে খাবার সংগ্রহ করতে পারবে। মেছো বিড়াল নিশাচর প্রাণী হওয়ায় রাতেই এগুলোকে অবমুক্ত করা হয়েছে।’

 

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। পরে ছানাগুলোকে অবমুক্ত করার জন্য দিকনির্দেশনা দিই। মেছো বিড়াল বিরল প্রজাতির প্রাণী। এরা সাধারণত বড় জলাশয়, পুকুর ও হাওর এলাকায় বসবাস করে। মূল খাবার মাছ হলেও খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এরা ইঁদুর, বিষধর সাপসহ পরিবেশের ক্ষতিকারক প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘গায়ে কালো ছোপ থাকায় অনেক সময় মানুষ মেছো বিড়ালকে চিতা বাঘ বলে ভুল করে হত্যা করে। অথচ প্রাণীটি সম্পূর্ণ নিরীহ। তাই সংরক্ষণে সবার সচেতনতা প্রয়োজন।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন