উৎপাদন খরচ ২৫-২৭ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায় কৃষকদের অভিযোগ, জমিতে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচই পড়ে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। তার সঙ্গে হিমাগার ভাড়া ৬ টাকা, পরিবহন ও বস্তা মিলিয়ে মোট খরচ দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ২৭ টাকা। অথচ সেই আলুই হিমাগারের গেটে বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকায়। খুচরা বাজারেও দাম প্রতি কেজি মাত্র ২০ টাকা।
অথচ গত বছর একই সময় আলুর দাম ছিল ৮০ টাকার মতো। ফলে এবার হিমাগারের ভাড়া পরিশোধ করতে করতেই কৃষকের পুঁজি প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, লোকসান ঠেকাতে তারা বাধ্য হয়ে আলু বিক্রি করছেন কিন্তু দাম এমন যে তা দিয়ে খরচই উঠছে না।
হিমাগারের ত্রুটিতে নষ্ট হচ্ছে বীজ অনেক কৃষকের অভিযোগ, জেলার কয়েকটি হিমাগারে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা হয়নি। ফলে সংরক্ষিত বীজ আলুর মান নষ্ট হয়েছে, যা তাদের লোকসান আরও বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে বলে জানান কৃষকরা।
চরকেওয়ার এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রুহুল আমিন বলেন, ‘উৎপাদন খরচই যে উঠবে না, তাতে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু হিমাগার থেকে বীজ আলু নষ্ট হয়ে বের হবে, তা ভাবিনি। আমাদের আর বাঁচার উপায় নেই।’
আরও পড়ুন: কৃষক-ব্যবসায়ীদের না জানিয়ে আলু বিক্রি করেছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ
সার ও আমদানিকৃত বীজ নিয়ে ক্ষোভ নতুন মৌসুম শুরুর সাথে সাথে সার সংকট ও উন্নতমানের বীজের অভাব নিয়ে কৃষকের ক্ষোভ চরমে। ডিলাররা নির্দিষ্ট দামে সার দিতে না চাওয়া এবং আমদানিকৃত বীজের দাম বেশি নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
হিমাগারে সংরক্ষিত আলু থেকে নষ্ট আলুগুলো পৃথক করছেন শ্রমিকরা। ছবি: সময় সংবাদ
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের আগ্রহ কমে গেছে, তাই এবার আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা কমেছে। তবে সার ও বীজ ব্যবসায়ীদের বিষয়ে কড়া নজরদারি চলছে।
আরও পড়ুন: নেপালে বাড়ছে বাংলাদেশি আলুর চাহিদা, একদিনেই গেল হাজার মেট্রিক টনের বেশি
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সান্তনা রাণী পুতুল বলেন, ‘জেলায় চলতি মৌসুমে ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সার ও বীজ ডিলারদের সতর্ক করা হয়েছে। কেউ যদি সার বেশি দামে বিক্রি করে তার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে। এতে সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন। কৃষকদের ক্ষতি কমাতে আমরা মাঠপর্যায়ে নজরদারি বাড়িয়েছি।’
হিমাগারে এখনো ১ লাখ ৩৮ হাজার টন আলু মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে এখনো মজুত রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি আলু। এর মধ্যে শুধু খাবার আলুই ৭৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। এগুলো ধীরে ধীরে বাজারজাত করার চেষ্টা চলছে।
‘উৎপাদন বেশি, চাহিদা কম: চাপে কৃষক’ একটি তথ্যানুসারে, সর্বশেষ মৌসুমে শুধু মুন্সীগঞ্জেই আলু উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৫৩৮ মেট্রিক টন। আর দেশের মোট উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ মেট্রিক টন, যেখানে দেশের বার্ষিক চাহিদা ১ কোটি মেট্রিক টনের মতো। অর্থাৎ উৎপাদন বেশি এবং চাহিদা কম হওয়ায় বাজারে চাপ আরও বেড়েছে।
কৃষকরা বলছেন, বাজার স্বাভাবিক না হলে এবং উৎপাদন খরচ না কমলে আগামী মৌসুমে আলু চাষে বড় ধরনের ধস নামতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি তদারকি, রফতানি বৃদ্ধি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার দাবি করছেন তারা।
]]>
১ দিন আগে
২





Bengali (BD) ·
English (US) ·