সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অঞ্চল থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে কথা হয়েছে উভয়ের। ২০২২ সালের জুন মাসে গালওয়ানে ভারত ও চীনা সেনাদের সংঘর্ষের পর থেকেই দুদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। সামরিক স্তরে একাধিকবার আলোচনা হয়েছিল দেশ দুটির মধ্যে।
পরে চলতি বছর অক্টোবরে রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় দুই দেশ।
স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ভারত-চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চল থেকে সেনা সরানোর কাজ কতদূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে আলোচনা হয় জয়শঙ্কর ও ওয়াং ই’র মধ্যে।
আরও পড়ুন: সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাদের মিষ্টি বিনিময়, স্বাভাবিক হবে সম্পর্ক?
বৈঠকের পর জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়েও কথা হয়েছে তাদের। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যসব পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। চীনও চাইছে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও মসৃণ করতে।
দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শুরুর আগে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও সেই আভাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চীন ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। পারস্পরিক ভরসা আরও বাড়াতেও উৎসাহী চীন।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় এলএসি পেরিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চীনা সেনাদের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গালওয়ানে চীনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় সেনাদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েকজন চীনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন। সেখান থেকেই দুদেশের সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা তৈরি হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ভারত সীমান্তের কাছে এবার হেলিপোর্ট নির্মাণ করছে চীন?
গালওয়ানকাণ্ডের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে দফায় দফায় বৈঠক শুরু হয়েছিল। শেষে গত মাসে সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে ভারত ও চীন ঐকমত্যে আসে। চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থায় ইতি পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশই দেপসাং, ডেমচক এলাকা থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত চার বছরে যত অস্থায়ী সেনাছাউনি তৈরি হয়েছিল, সেগুলোও সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংকট কাটাতে চীন-ভারত উভয় দেশই পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। সেনা সরানোর চুক্তির পর চলতি বছরের দীপাবলিতে চীনা সেনাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের মিষ্টি বিনিময় করতেও দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বেইজিং-নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হলে, সামগ্রিকভাবে এশিয়ার কূটনীতিতে তা বড় প্রভাব ফেলবে।