এবার এই সাহসী শিক্ষিকাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। বুধবার (২৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানান তিনি।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘ঢাকার একটি স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর শুনে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। এতে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।’
বার্তায় শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরীর কথা উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন মাহরিন চৌধুরী নামে একজন শিক্ষক যিনি শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রেখে আগুনের মধ্যে ছুটে গিয়েছিলেন। তার এই অসীম সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গভীর শোকের মুহূর্তে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ভাই ও বোনদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে। আমরা আপনাদের পাশে আছি। এই দুর্ঘটনায় নিহত প্রতিটি প্রাণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের জন্য আমরা শোকাহত।’
আরও পড়ুন: তিনি এই দেশের সত্যিকারের বীর: পড়শী
গত সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানী ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত ঘটে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনীর ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল চত্বরের একটি দোতলা ভবনের ওপর গিয়ে বিধ্বস্ত হয়।
পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম সাগর যুদ্ধবিমানটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরীও রয়েছেন। গত সোমবার (২১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন তিনি মারা যান। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: সিক্রেট সুপারস্টার ম্যাম মাহরিন: আসিফ আকবর
গত মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকার বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
মাহরিনের চাচা ডিডো চৌধুরী জানান, সোমবার প্রতিদিনের মতো স্কুল শেষ করে শিশুদের হাত ধরে গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছিলে কো-অর্ডিনেটর মাহরিন। সেই সময় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দগ্ধ হয় মাহরিন। কিন্তু তখনো শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিলেন মাহরিন।
আগুনে দগ্ধ হলেও তিনি বাচ্চাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলেন এবং ২০ শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন। ডিডো চৌধুরী আরও বলেন, ‘দগ্ধ শরীর নিয়েও ২০ শিক্ষার্থীকে নিরাপদে বের করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে নেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমার ভাস্তির মৃত্যু হয়।’
আরও পড়ুন: বুকের কাছে নিয়ে বলল তোমার সাথে আর দেখা হবে না- মাহরিনের স্বামীর আহাজারি
মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলাল জানান, আমার বাচ্চা দুটি এতিম হয়ে গেল। তাকে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি কেন চলে আসোনি, তখন সে বলেছিল; ওরাও তো আমার সন্তানের মতো। ওদের ছেড়ে কীভাবে আসতাম।’
]]>